মালদ্বীপ ভিসার দাম কত ২০২৪

মালদ্বীপ ভিসার দাম কত

দক্ষিণ এশিয়ার ভারত মহাসাগরের কোলে অবস্থিত মালদ্বীপ, একটি অসংখ্য ছোট দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত অপূর্ব সুন্দর দেশ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনন্য দৃষ্টান্ত এই দ্বীপ রাষ্ট্রটি শুধু পর্যটকদের জন্য নয়, কর্মসংস্থান প্রার্থীদের জন্যও একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষ মালদ্বীপে ভ্রমণ ও কাজের জন্য পৌঁছে থাকেন। বিশেষ করে পর্যটনের ক্ষেত্রে মালদ্বীপের জনপ্রিয়তা অপরিসীম। মালদ্বীপের রাজধানী মালে, যা নিজেই একটি দ্বীপ, একদিকে আধুনিক শহরের সব সুযোগ-সুবিধা এবং অন্যদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মিশ্রণ। মালে থেকেই মালদ্বীপের সব পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে সহজে যাতায়াত করা যায়।

মালদ্বীপ ভিসার দাম কত

মালদ্বীপের ভিসার দাম কত, তা সঠিকভাবে জানা জরুরি। মালদ্বীপের ভিসা মূলত ভ্রমণ ও কাজের জন্য হয়ে থাকে। বাংলাদেশের নাগরিকরা ৩০ থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত ভিসা ছাড়াই পাসপোর্ট দেখিয়ে সেখানে অবস্থান করতে পারেন, তবে ৯০ দিন পর্যন্ত থাকতে হলে ৩৩৫০ টাকা দিয়ে ভিসার মেয়াদ বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য কিছুটা ভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক মালদ্বীপ ভিসার দাম ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে।

মালদ্বীপে যেতে কত টাকা লাগে?

বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপে যেতে খুব বেশি টাকা প্রয়োজন হয় না। বৈধ পাসপোর্ট নিয়ে সরাসরি মালদ্বীপে যেতে পারবেন। মালদ্বীপ, তার স্বর্গীয় সৌন্দর্য এবং ক্রিস্টাল ক্লিয়ার পানির জন্য পরিচিত, ভ্রমণ এবং কাজের উভয়ের জন্যই বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়।মালদ্বীপে ভ্রমণ এখন অনেক সহজ এবং সাশ্রয়ী। সরাসরি ফ্লাইট এবং কম খরচের কারণে, মালদ্বীপ এখন মধ্যবিত্ত পর্যটকদের জন্যও একটি উপযুক্ত গন্তব্য হয়ে উঠেছে। ভিসা সহ ৩ দিন থেকে ১ সপ্তাহ থাকতে চাইলে খরচ হবে ১ লক্ষ থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা। এছাড়াও, যদি ওয়ার্ক পারমিট নিতে চান, তবে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে।

মালদ্বীপে ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস

মালদ্বীপে ভ্রমণের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয়:

  • বৈধ সর্বনিম্ন ৬ মাসের পাসপোর্ট
  • জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম নিবন্ধন
  • কয়েক কপি ছবি
  • মেডিকেল রিপোর্ট
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
  • ভিসা তৈরির ফরম
  • কাজের অভিজ্ঞতা সার্টিফিকেট
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট
  • করোনা ভ্যাকসিনের সার্টিফিকেট

মালদ্বীপে কাজের ভিসার দাম

মালদ্বীপে কাজের সুযোগ গ্রহণ করতে চান? তাহলে আপনাকে অবশ্যই সঠিকভাবে কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। কাজের ভিসার জন্য সর্বনিম্ন ছয় মাসের বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে। ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মেয়াদ ২, ৪ এবং ৬ বছর পর্যন্ত হতে পারে। কাজের ভিসা তৈরি করতে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হবে। মালদ্বীপে পৌঁছানোর জন্য এবং কাজ শুরু করতে মোট খরচ আনুমানিক ৩ লক্ষ থেকে ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এই খরচের মধ্যে বিমান ভাড়া, থাকার খরচ, কাজের ভিসা ফি এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ অন্তর্ভুক্ত।

কাজের ভিসার ধরন

মালদ্বীপে কাজের ভিসা সাধারণত তিনটি মেয়াদে দেওয়া হয়:

  • ২ বছর: কম মেয়াদের কাজের চুক্তির জন্য।
  • ৪ বছর: দীর্ঘমেয়াদী কাজের চুক্তির জন্য।
  • ৬ বছর: স্থায়ী বা দীর্ঘমেয়াদী কাজের চুক্তির জন্য।

মালদ্বীপ টুরিস্ট ভিসার দাম

বর্তমান সময়ে মালদ্বীপে টুরিস্ট ভিসা পেতে চাইলে প্রাথমিক খরচ ধরা হচ্ছে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত। এই ভিসায় আপনি সেখানে ৩০ দিন থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত থাকতে পারবেন। যদি আপনি এর থেকে বেশি দিন থাকতে চান, তাহলে ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করতে হবে এবং এটির জন্য অতিরিক্ত খরচ পরবে, যা আনুমানিক ১০ হাজার টাকা। অধিক সময়ের জন্য মালদ্বীপে অবস্থান করতে হলে ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে। এর সাথে যুক্ত থাকবে অতিরিক্ত খরচ যা সাধারণত ১০ হাজার টাকা হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি ভ্রমণকারীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ যে তারা এই অতিরিক্ত খরচের বিষয়টি আগেভাগেই পরিকল্পনায় রাখেন। বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপে টুরিস্ট ভিসায় ভ্রমণ করতে চাইলে সম্পূর্ণ খরচের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে বিমান ভাড়া ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যয়। সাধারণত এই খরচ ১ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকার মধ্যে হতে পারে। ভ্রমণের সময়কাল, বিমান সংস্থা, এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয়ের উপর নির্ভর করে এই খরচের পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে।

মালদ্বীপে রিসোর্ট ভিসা

মালদ্বীপে কাজের সুযোগ সন্ধান করতে গেলে আপনাকে দুটি প্রধান ভিসার কথা মনে রাখতে হবে: রিসোর্ট ভিসা এবং রেস্টুরেন্ট ভিসা। এ দুটি ভিসার মধ্যে প্রক্রিয়াটি প্রায় একই রকম। মালদ্বীপে রিসোর্ট বা রেস্টুরেন্টে কাজ করার জন্য ভিসা তৈরি করতে হলে আপনাকে আনুমানিক ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। এই খরচের মধ্যে সমস্ত প্রশাসনিক ফি এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে। বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপে কাজের জন্য যাওয়ার মোট খরচ আনুমানিক ২ লক্ষ থেকে ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এই খরচের মধ্যে বিমান ভাড়া, বাসস্থান, এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে।

আবেদন প্রক্রিয়া
  1. ডকুমেন্টস প্রস্তুতি: প্রথমে আপনাকে আপনার পাসপোর্ট, ছবি, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রস্তুত করতে হবে।
  2. নিয়োগকর্তার অফার লেটার: মালদ্বীপে কাজ করতে হলে একটি অফার লেটার থাকা প্রয়োজন। এটি আপনাকে আপনার নিয়োগকর্তা প্রদান করবে।
  3. ভিসা আবেদন ফর্ম পূরণ: আপনার সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে দিয়ে আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে।
  4. ফি পরিশোধ: ভিসা প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ফি পরিশোধ করতে হবে।
  5. এম্বাসিতে জমা: সমস্ত ডকুমেন্টস এবং ফি জমা দিয়ে ভিসা প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।

মালদ্বীপে কাজের বেতন

মালদ্বীপে কাজের জন্য ভাল বেতন পাওয়া যায়। ন্যূনতম প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ইনকাম করা যায়। ভালো কাজে বেতন আরও বেশি হতে পারে। রেস্টুরেন্ট ভিসায় প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা এবং ড্রাইভিং ভিসায় ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা ইনকাম করা সম্ভব।

বেতনের নির্দিষ্ট তথ্য
  • রিসেপশনিস্ট: মাসিক বেতন আনুমানিক ৩০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
  • শেফ: অভিজ্ঞতা অনুযায়ী শেফদের বেতন মাসিক ৫০,০০০ থেকে ৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
  • হাউজকিপিং স্টাফ: মাসিক বেতন আনুমানিক ২৫,০০০ থেকে ৪০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
  • ওয়েটার: মাসিক বেতন আনুমানিক ২০,০০০ থেকে ৩৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

শেষ কথা

মালদ্বীপে ভ্রমণ আপনাকে এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেবে, যা আপনার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে। এই অসাধারণ দ্বীপ রাষ্ট্রের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিষ্কার নীল জল এবং সমৃদ্ধ সামুদ্রিক জীবন আপনাকে বারবার এখানে ফিরিয়ে আনবে। অসংখ্য দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত মালদ্বীপে ভ্রমণ ও কাজের জন্য যে কোন দেশের মানুষ আসতে পারেন। তবে ভিসা ছাড়া কোন দেশে পৌঁছানো সম্ভব নয়। আশা করি, মালদ্বীপ ভিসার দাম ও অন্যান্য তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। যদি এই পোস্টটি আপনার কাছে উপকারী মনে হয়, তবে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top