ইউরোপে পড়াশোনা, ভ্রমণ বা কাজের জন্য যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন? তাহলে আপনাকে সেনজেন এবং নন সেনজেন দেশের মধ্যে পার্থক্য এবং সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। সেনজেন দেশগুলি প্রধানত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য এবং অনেক সুবিধা প্রদান করে, যা নন সেনজেন দেশগুলিতে পাওয়া যায় না। এই নিবন্ধে আমরা সেনজেন ও নন সেনজেন দেশগুলির তালিকা এবং তাদের সুযোগ সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
সেনজেন ভুক্ত ও নন সেনজেন ভুক্ত দেশ বলতে কী বোঝায়
ইউরোপ একটি জটিল মহাদেশ, যেখানে বহু দেশের ভৌগোলিক, রাজনৈতিক, ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রয়েছে। ইউরোপের মধ্যে ভ্রমণের জন্য বিশেষ কিছু অঞ্চল আছে যেগুলো সেনজেন চুক্তির আওতায় পড়ে। সেনজেন চুক্তি ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে সীমান্ত পারাপারকে সহজ ও মুক্ত করেছে। এই চুক্তির ফলে সেনজেন ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভ্রমণ করার জন্য আলাদা ভিসার প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে, নন সেনজেন দেশগুলোর জন্য আলাদা ভিসা নিয়মাবলী প্রযোজ্য।
- সেনজেন ভিসাঃ সেনজেন ভিসা হল একটি অভিন্ন ভিসা পদ্ধতি, যা সেনজেন এলাকা অন্তর্ভুক্ত ২৭টি দেশের মধ্যে সীমান্তহীন ভ্রমণ সুবিধা প্রদান করে। সেনজেন ভিসা প্রাপ্তির মাধ্যমে একজন ভ্রমণকারী একাধিক সেনজেনভুক্ত দেশে ভ্রমণ করতে পারেন। এটি ইউরোপের ভ্রমণকারীদের জন্য একটি বিশাল সুবিধা, কারণ একবার ভিসা প্রাপ্তির পর পুনরায় ভিসার জন্য আবেদন করার প্রয়োজন হয় না।
- নন-সেনজেন দেশঃ নন-সেনজেন দেশ বলতে বোঝায় সেনজেনভুক্ত নয় এমন দেশসমূহ। এমন দেশ রয়েছে ২২টি, যাদের নিজস্ব আলাদা ভিসা নীতি রয়েছে। এই দেশগুলোতে ভ্রমণের জন্য আলাদা ভিসার প্রয়োজন হয় এবং এক দেশের ভিসা অন্য কোন দেশে ভ্রমণের অনুমতি দেয় না। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডের মতো দেশগুলি সেনজেন এলাকায় অন্তর্ভুক্ত নয়, তাই তাদের জন্য ভিন্ন ভিসার প্রয়োজন হয়।
সেনজেন চুক্তি ১৯৮৫ সালে একটি ছোট্ট লুক্সেমবার্গ শহর সেনজেনে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তি ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণকে সরিয়ে দিয়ে একটি একক ভ্রমণ এলাকা তৈরি করেছে। সেনজেন অঞ্চলে ভ্রমণকারীরা একবার একটি সেনজেন ভিসা পেলেই পুরো অঞ্চলে অবাধে ভ্রমণ করতে পারেন। এই চুক্তি বর্তমানে ইউরোপের অনেক দেশে প্রযোজ্য।
সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকা
বর্তমানে সেনজেন অঞ্চলে ২৬টি দেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই দেশগুলো হলো:
- অস্ট্রিয়া
- বেলজিয়াম
- চেক প্রজাতন্ত্র
- ডেনমার্ক
- এস্তোনিয়া
- ফিনল্যান্ড
- ফ্রান্স
- জার্মানি
- গ্রিস
- হাঙ্গেরি
- আইসল্যান্ড
- ইটালি
- লাটভিয়া
- লিথুয়ানিয়া
- লুক্সেমবার্গ
- মাল্টা
- নেদারল্যান্ডস
- নরওয়ে
- পোল্যান্ড
- পর্তুগাল
- স্লোভাকিয়া
- স্লোভেনিয়া
- স্পেন
- সুইডেন
- সুইজারল্যান্ড
- লিচেনস্টাইন
- ক্রোয়েশিয়া
এই দেশগুলো সেনজেন চুক্তির আওতায় সীমান্ত পারাপার নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়েছে। এর ফলে এই দেশগুলোর মধ্যে ভ্রমণ সহজতর হয়েছে এবং পর্যটন ও ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যাপক সুবিধা অর্জিত হয়েছে।
সেনজেন দেশের সুবিধা
সেনজেনভুক্ত দেশের অনেক সুবিধা রয়েছে। এখানে উল্লেখযোগ্য কিছু সুবিধা আলোচনা করা হলো:
- ১. এক ভিসায় ২৭ দেশ ভ্রমণঃ সেনজেন ভিসা থাকলে আপনি ২৭টি সেনজেনভুক্ত দেশে ৯০ দিন পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারবেন। এটি ভ্রমণকারীদের জন্য একটি বিশাল সুবিধা, কারণ একবার ভিসা পেলেই তারা বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করতে পারেন।
- ২. সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে ঝামেলা কমঃ একবার সেনজেন ভিসা পেলে, আপনি সেনজেন এলাকার মধ্যে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে পারবেন কোনো পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই। এটি আপনাকে একটি মুক্ত ভ্রমণের অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
- ৩. দীর্ঘসময় ভ্রমণের সুযোগঃ সেনজেন ভিসা ৯০ দিনের জন্য বৈধ, যা দীর্ঘসময় ভ্রমণের জন্য যথেষ্ট। এটি আপনাকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখার এবং স্থানীয় সংস্কৃতি উপভোগ করার সুযোগ দেয়।
- ৪. কাজের সুযোগঃ সেনজেন ভিসা থাকলে আপনি সেনজেনভুক্ত যেকোনো দেশে কাজ করতে পারবেন। এতে আপনাকে কাজের জন্য আলাদা আলাদা ভিসা নিতে হবে না।
- ৫. শিক্ষার সুযোগঃ সেনজেন ভিসা থাকলে আপনি সেনজেন এলাকার যেকোনো দেশে পড়াশোনা করতে পারবেন। এতে আপনি বিভিন্ন দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি অর্জন করতে পারবেন।
- ৬. বসবাসের সুযোগঃ সেনজেন ভিসা থাকলে আপনি সেনজেনভুক্ত এলাকার যেকোনো দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এতে আপনাকে নতুন স্থানে নতুন জীবন শুরু করার সুযোগ দেয়।
- ৭. স্বাস্থ্যসেবাঃ সেনজেন ভিসা থাকলে আপনি সেনজেনভুক্ত যেকোনো দেশে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পাবেন। এটি আপনাকে অসুস্থতার সময় দ্রুত ও কার্যকর চিকিৎসা সেবা পেতে সহায়তা করে।
সেনজেন চুক্তির বাইরের দেশসমূহ
ইউরোপের অনেক দেশ সেনজেন চুক্তির আওতায় নেই। এই দেশগুলোতে ভ্রমণের জন্য আলাদা ভিসার প্রয়োজন হয় এবং সীমান্তে কড়া নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে। সেনজেন চুক্তির বাইরের দেশগুলো হলো:
ইউরোপের ২৩টি নন-শেনজেন ভুক্ত দেশগুলি হল:
- আলবানিয়া
- আর্মেনিয়া
- আজারবাইজান
- বেলারুশ
- বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা
- বুলগেরিয়া
- সাইপ্রাস
- জর্জিয়া
- আয়ারল্যান্ড
- কোসোভো
- মলদোভা
- মন্টেনেগ্রো
- উত্তর মেসিডোনিয়া
- রোমানিয়া
- রাশিয়া
- সার্বিয়া
- তুরস্ক
- ইউক্রেন
- যুক্তরাজ্য
- আন্ডোরা
- সান মারিনো
- মোনাকো
- ভ্যাটিকান সিটি
এই দেশগুলোর জন্য আলাদা ভিসার প্রয়োজন হয় এবং ভ্রমণের সময় সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি মেনে চলতে হয়।
শেষ কথা
সেনজেন এবং নন-সেনজেন দেশগুলোর মধ্যে এই পার্থক্যগুলো মাথায় রেখে আপনি আপনার ভ্রমণ, পড়াশোনা বা কাজের পরিকল্পনা করতে পারেন। ইউরোপের যেকোনো দেশে যাওয়ার পূর্বে এই তথ্যগুলো জেনে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।