ইতালি যেতে কত টাকা লাগে ২০২৪

ইতালি যেতে কত টাকা লাগে

ইতালি, পশ্চিম ইউরোপের এক মনোরম ও উন্নত দেশ, যা তার ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার মানের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। এই দেশটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে এর ভিসা প্রক্রিয়া ও প্রবাস জীবন অনেকের কাছেই আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে অনেকেই ইতালিতে পাড়ি জমাচ্ছেন কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে, কারণ ইতালিতে অন্যান্য দেশের তুলনায় উচ্চ বেতন পাওয়া যায়। এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো কীভাবে আপনি ইতালিতে যেতে পারেন, কত টাকা খরচ হতে পারে, সেখানে বেতন কেমন, এবং ভিসা প্রক্রিয়া কীভাবে সম্পন্ন করবেন। পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকলে প্রবাস জীবনে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। তাই চলুন, আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে জানি ইতালিতে যাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে।

ইতালিতে যেতে কত টাকা লাগে

ইতালিতে যাওয়ার জন্য যে খরচ লাগবে তা মূলত নির্ভর করে আপনি কোন ভিসার মাধ্যমে যাচ্ছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে মানুষ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ইতালিতে যাচ্ছে এবং সেই অনুযায়ী খরচও ভিন্ন হয়। প্রধানত দুটি ধরনের ভিসা প্রচলিত রয়েছে—সিজোনাল ভিসা এবং নন সিজোনাল ভিসা।

সিজোনাল ভিসা

সিজোনাল ভিসা মূলত স্বল্প মেয়াদী কাজের জন্য দেওয়া হয়, যেমন ২ থেকে ৩ মাসের জন্য। এই ভিসায় কাজের সুযোগ সাধারণত কৃষি বা পর্যটন খাতে সীমিত থাকে।

  • খরচ: সিজোনাল ভিসার মাধ্যমে ইতালি যেতে হলে আপনার মোট খরচ সাধারণত ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এই খরচের মধ্যে আপনার বিমান ভাড়া, ভিসা ফি, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

নন সিজোনাল ভিসা

নন সিজোনাল ভিসা দীর্ঘ মেয়াদী কাজের জন্য প্রদান করা হয়। এই ভিসায় আপনি স্থায়ীভাবে কাজ করতে পারবেন এবং এটি পেয়ে গেলে ইতালিতে স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ রয়েছে।

  • খরচ: নন সিজোনাল ভিসার জন্য খরচ কিছুটা বেশি হয়ে থাকে, যা ৯ থেকে ১৫ লাখ টাকার মধ্যে হতে পারে। এই খরচের মধ্যে ভিসা ফি, বিমান ভাড়া, এবং ইতালিতে পৌঁছে থাকার খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

আরও পড়ুনঃ ইতালিতে বৈধ হওয়ার উপায়

ইতালিতে বেতন কত

ইতালিতে আপনি কত বেতন পাবেন তা নির্ভর করবে আপনি কোন ধরনের কাজ করছেন তার উপর। সাধারণত এখানে বিভিন্ন ধরনের চাকরির বেতন ভিন্ন হয়, তবে তুলনামূলকভাবে পরিশ্রমী কাজের বেতন বেশি হয়ে থাকে।

  • মাঝারি বেতন: আপনি যদি শারীরিক শ্রম নির্ভর কাজ করেন, তবে বেতন শুরু হতে পারে ৬০ হাজার টাকা থেকে। তবে আপনি যদি দক্ষতাপূর্ণ বা প্রযুক্তিগত কোনো কাজে নিযুক্ত হন, তাহলে এই বেতন ২ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
  • উচ্চ বেতন: কাজের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার উপর নির্ভর করে, বেতন আরোও বাড়তে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে উচ্চ দক্ষতার প্রয়োজনীয় কাজগুলিতে বেতন আরোও বেশি হতে পারে।

ইতালি ভিসা আবেদন করার নিয়ম

ইতালি ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে প্রথমত আপনাকে পুলিশের ক্লিয়ারেন্স সনদপত্র নিতে হবে। এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ ইতালি এম্বাসিতে আবেদন জমা দিতে হবে। ভিসার জন্য আপনার পাসপোর্ট অবশ্যই ডিজিটাল হতে হবে এবং কমপক্ষে ৬ মাসের মেয়াদ থাকতে হবে। যদি সরকারি ভাবে যেতে চান তবে সরাসরি এম্বাসিতে যোগাযোগ করুন। এছাড়াও, ইতালির কোনো প্রবাসীর সাহায্য নিলে ভিসা প্রক্রিয়া আরও সহজ হতে পারে।

ইতালি ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ইতালির ভিসার জন্য আবেদন করার সময় সঠিক কাগজপত্র এবং ডকুমেন্ট জমা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। বিভিন্ন ধরনের ভিসার জন্য বিভিন্ন কাগজপত্র প্রয়োজন হতে পারে।

স্টুডেন্ট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ইতালিতে পড়াশোনা করতে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  1. পাসপোর্ট: একটি অনুমোদিত ডিজিটাল পাসপোর্ট।
  2. শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র: আপনার পূর্ববর্তী শিক্ষাগত যোগ্যতার সমস্ত সনদপত্র।
  3. জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্ম নিবন্ধন: NID কার্ড এবং জন্ম সনদ।
  4. অফার লেটার: ইতালীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া অফার লেটার।
  5. কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সনদপত্র: কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়ার সনদপত্র।
  6. IELTS এর স্কোর: ইংরেজি ভাষার দক্ষতা প্রমাণ করতে IELTS সনদপত্র।
  7. ভিসা অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম: সম্পূর্ণ পূরণ করা ভিসা আবেদন ফর্ম।
  8. পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদপত্র: আপনার পূর্বের রেকর্ড যাচাইয়ের জন্য পুলিশের ক্লিয়ারেন্স।

ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

কাজের জন্য ইতালি যেতে হলে নিচের কাগজপত্র গুলো প্রয়োজন হবে:

  1. পাসপোর্ট: অনুমোদিত ডিজিটাল পাসপোর্ট।
  2. মেডিক্যাল রিপোর্ট: স্বাস্থ্যের প্রমাণ দিতে মেডিক্যাল সনদ।
  3. জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয় পত্র: আপনার ব্যক্তিগত তথ্য প্রমাণিত করতে।
  4. পুলিশ ক্লিয়ারেন্স: আপনি যে কোনো অপরাধমূলক কার্যকলাপের সাথে জড়িত নন তার প্রমাণ।
  5. ভিসা অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম: ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আবেদন ফর্ম।
  6. কোভিড-১৯ এর সনদপত্র: কোভিড ভ্যাকসিন প্রাপ্তির প্রমাণ।
  7. স্পন্সর লেটার: আপনার কর্মস্থল থেকে পাওয়া সত্যায়িত পত্র।

এই কাগজপত্র ছাড়া অন্যান্য ভিসার জন্য আলাদা আলাদা কাগজপত্র প্রয়োজন হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ ইতালি স্পন্সর ভিসা 

ইতালি ভিসার প্রকারভেদ

ইতালি ভিসা মূলত দুইটি প্রধান ক্যাটেগরিতে বিভক্ত—সিজোনাল এবং নন সিজোনাল। এর পাশাপাশি আরো কয়েকটি ভিসার প্রকার রয়েছে, যা মূলত ভ্রমণের উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে।

প্রধান ভিসার প্রকারভেদ

  1. ইতালি স্টুডেন্ট ভিসা: পড়াশোনার জন্য ব্যবহৃত।
  2. ইতালি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা: কাজের জন্য ব্যবহৃত।
  3. ইতালি কৃষি ভিসা: কৃষি খাতে কাজের জন্য দেওয়া হয়।
  4. ইতালি ট্যুরিস্ট ভিসা: পর্যটন ভ্রমণের জন্য।
  5. ইতালি কনস্ট্রাকশন ভিসা: নির্মাণ খাতে কাজের জন্য প্রযোজ্য।

ইতালির টাকা বাংলাদেশের কত টাকা

বর্তমান মান অনুযায়ী, ১ ইতালীয় ইউরো সমান প্রায় ১২৯ টাকা ১৩ পয়সা বাংলাদেশি টাকা। তবে ইউরোর মান পরিবর্তনশীল, যা বাজারের উপর নির্ভর করে ওঠানামা করে। ইউরোর মূল্য সাধারণত ১২৮ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে পরিবর্তিত হতে থাকে। ব্যাংক অনুযায়ী টাকার মান সামান্য পার্থক্য হতে পারে, তাই টাকা লেনদেনের পূর্বে আপনার ব্যাংকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

আরও পড়ুনঃ ইতালির আজকের টাকার মান কত

বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার উপায়

বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মাধ্যমে সহজেই ইতালি যাওয়া যায়। সরকারি ভাবে গেলে খরচ কিছুটা কম হয় এবং কাজ পাওয়া দ্রুত হয়। তবে আপনি যদি বেসরকারি ভাবে যান, তবে আরো বেশি টাকা খরচ হতে পারে।

গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

  • পাসপোর্ট: একটি বৈধ ডিজিটাল পাসপোর্ট তৈরী করুন।
  • প্রয়োজনীয় খরচ: ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য উপযুক্ত খরচ সম্বন্ধে জেনে নিন।
  • কাগজপত্র: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ ভিসার জন্য আবেদন করুন।
  • শর্তাবলী: ইতালি এম্বাসি কখনো কখনো কিছু শর্ত প্রযোজ্য করতে পারে, সেই শর্তগুলো মেনে চলুন।

সরকারি ভাবে যেতে চাইলে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করুন এবং আরো সহায়তার জন্য ইতালিতে বসবাসকারী প্রবাসীদের সাথে কথা বলতে পারেন।

শেষ কথা

ইতালিতে প্রবাসী হিসেবে যেতে চান? আপনি যদি সঠিক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিয়ে ইতালিতে যান তবে সেখানে একটি সফল এবং স্থায়ী প্রবাস জীবন গড়ে তুলতে পারবেন। এই আর্টিকেলে আমরা ইতালিতে যাওয়ার প্রক্রিয়া, খরচ, বেতন, এবং ভিসার বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আলোচনা করেছি। আশাকরি, এই তথ্যগুলো আপনার ভ্রমণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হবে।

আপনার যদি কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে আমাদের সাথে কমেন্টে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top