এসির দাম কত ২০২৪

এসির দাম কত

বাংলাদেশের বাজারে এসি (এয়ার কন্ডিশনার) ক্রয়ের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। গ্রীষ্মের তীব্র তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা সামলাতে এসি ক্রয়ের প্রবণতা বাড়ছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ও আর্থিক উন্নয়নের সাথে সাথে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের ধারাও বেড়েছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে এয়ার কন্ডিশনার (AC) ক্রয়ের প্রবণতা দ্রুতগতিতে বাড়ছে। এই প্রবণতার পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ—বাড়তি তাপমাত্রা, উন্নত জীবনমান, এবং আর্থিক সামর্থ্য। এই ব্লগ পোস্টে আমরা বাংলাদেশের বাজারে ২০২৪ সালের এয়ার কন্ডিশনারের দামের প্রবণতা, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মডেল, তাদের বৈশিষ্ট্য এবং কেনা কাটার কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করবো।

বাজারে এসির ধরণ ও প্রকারভেদ

  • ১. নন ইনভার্টার এসি ( Non inverter AC): নন-ইনভার্টার এসি একটি স্থির গতির কম্প্রেসরের মাধ্যমে কাজ করে, যা চালু হয়ে যায় এবং নির্দিষ্ট তাপমাত্রা অর্জন করা হলে বন্ধ হয়ে যায়।
  • ২. ইনভার্টার এসি (Inverter AC): ইনভার্টার এসি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে অত্যন্ত কার্যকর। এই ধরণের এসি কুলিং ক্ষমতা অনুযায়ী কম্প্রেসরের গতি নিয়ন্ত্রণ করে, যা এনার্জি খরচ কমাতে সাহায্য করে।
  • ৩. উইন্ডো এসি (Window AC): উইন্ডো এসি একটি কম্প্যাক্ট ইউনিট যা জানালায় বসানো হয়। এটি সাধারণত ছোট ঘরের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং ইনস্টলেশন প্রক্রিয়া সহজ।
  • ৪. পোর্টেবল এসি (Portable AC): পোর্টেবল এসি সহজে সরানো যায় এবং এটি ছোট স্থানের জন্য আদর্শ, যেখানে স্থায়ী ইনস্টলেশন সম্ভব নয়।
  • ৫. সেন্ট্রাল এসি (Central AC): সেন্ট্রাল এসি বড় বাড়ি, অফিস বিল্ডিং বা শপিং মলের জন্য উপযুক্ত। এটি পুরো ভবনে সমানভাবে শীতল বায়ু সরবরাহ করে।
  • ৬. ডাক্টেড এসি (Ducted AC): ডাক্টেড এসি বাতাস পরিবাহিত করতে ডাক্টস ব্যবহার করে, যা বাড়ির বিভিন্ন কক্ষে সমান তাপমাত্রা বজায় রাখে। এটি বিলাসিতা বাসস্থানের জন্য আদর্শ।

এসির প্রধান ব্র্যান্ডসমূহ

বাংলাদেশের বাজারে এসির দাম প্রায়ই বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে যেমন: ব্র্যান্ড, ক্ষমতা (টন ভিত্তিক), এনার্জি এফিসিয়েন্সি রেটিং (EER), এবং অতিরিক্ত ফিচারস যেমন ইনভার্টার টেকনোলজি, ওয়াইফাই সংযোগ, এয়ার পিউরিফায়ার ইত্যাদি।

বাংলাদেশে এসির বাজারে বেশ কিছু নামকরা ব্র্যান্ড রয়েছে যেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো:

  1. General – জাপানি টেকনোলজির এই ব্র্যান্ড বাংলাদেশে এসির জন্য খুবই জনপ্রিয়। এদের দাম অন্যান্য ব্র্যান্ডের চেয়ে সামান্য বেশি হলেও দীর্ঘমেয়াদি সার্ভিস এবং কার্যকারিতা এর পক্ষে কথা বলে।
  2. Hitachi – হিটাচি ব্র্যান্ডের এসি উন্নত এয়ার ফিল্টারিং প্রযুক্তি এবং উচ্চ কুলিং ক্ষমতা সহ পরিচিত।
  3. Walton – বাংলাদেশি ব্র্যান্ড হিসাবে Walton এসি বাজারে ভালো মানের প্রোডাক্ট অফার করে থাকে। এর দাম সাধারণত অন্যান্য বিদেশি ব্র্যান্ডের তুলনায় কম।
  4. Gree – চীনা প্রস্তুতকারক Gree এর এসি বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত। বাংলাদেশে এর মার্কেট শেয়ার ব্যাপক এবং এটি এনার্জি এফিসিয়েন্সি ও দীর্ঘ টিকে থাকার সুবিধা দেয়।
  5. Samsung এবং LG – এই কোরিয়ান ব্র্যান্ডগুলো উচ্চমানের ইনভার্টার এসি প্রদান করে থাকে যা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সাহায্য করে।

এসির দাম কত

২০২৪ সালে বাংলাদেশে এসির দাম প্রায় ৩৫,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। দামের এই বিস্তার নির্ভর করে ব্র্যান্ড, ক্ষমতা (যেমন ১ টন, ১.৫ টন ইত্যাদি), এবং অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর উপর (যেমন ইনভার্টার প্রযুক্তি, এনার্জি সেভিং মোড ইত্যাদি)।

২০২৪ সালে এসির দামের প্রবণতা বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করছে। সাধারণত, একটি ভালো মানের 1 টন এসির দাম প্রায় ৫০,০০০ থেকে ৬৫,০০০ টাকার মধ্যে পড়তে পারে। 1.5 টন এসির ক্ষেত্রে এই দাম আরও বাড়তে পারে, প্রায় ৬০,০০০ থেকে ৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত এবং 2 টন এসির দাম ৯০,০০০ টাকা থেকে ১,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত । বেশি হওয়ার প্রধান কারণ হল ফিচার এবং শক্তি দক্ষতা।

বাজারে এসির ধরণ ও প্রকারভেদ

নন ইনভার্টার এসির দাম

নন-ইনভার্টার এসি একটি স্থির গতির কম্প্রেসরের মাধ্যমে কাজ করে, যা চালু হয়ে যায় এবং নির্দিষ্ট তাপমাত্রা অর্জন করা হলে বন্ধ হয়ে যায়। এটি রুমের তাপমাত্রা নির্ধারিত পর্যায়ে পৌঁছানো পর্যন্ত কাজ করে এবং তারপর বন্ধ হয়ে যায়, চালু ও বন্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া এর বিদ্যুৎ খরচ বৃদ্ধি পায়, যা মাসিক বিদ্যুৎ বিলে প্রভাব ফেলে।।

নন-ইনভার্টার এসিওয়ালটন এসির দামজেনারেল এসির দাম
১ টনপ্রায় ৩৫,০০০ টাকা থেকে শুরুপ্রায় ৪৫,০০০ টাকা থেকে শুরু
১.৫ টনপ্রায় ৪৯,৮০০ টাকা থেকে শুরুপ্রায় ৬০,০০০ টাকা থেকে শুরু
২ টনপ্রায় ৬০,৯০০ টাকা থেকে শুরুপ্রায় ৭৫,০০০ টাকা থেকে শুরু

ইনভার্টার এসির দাম

গরমের মৌসুমে ইনভার্টার এসি তার উন্নত প্রযুক্তি ও দীর্ঘমেয়াদী শক্তি সাশ্রয়ের কারণে অনেকের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে। এটি এমন এক ধরনের শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র যা বিদ্যুৎ খরচ কমাতে সক্ষম এবং পরিবেশগত দিক থেকেও অধিক সহায়ক। ইনভার্টার এসি একটি উন্নত কম্প্রেসর প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যা কম্প্রেসরের গতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং রুমের তাপমাত্রা অনুযায়ী এর শক্তি খরচ নিয়ন্ত্রণ করে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে এসি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় স্থিতিশীল ভাবে কাজ করতে পারে, যা বিদ্যুৎ খরচ কমানোর পাশাপাশি আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করে।

ইনভার্টার এসিওয়ালটন এসির দামজেনারেল এসির দাম
১ টন এসি৬৫,০০০ টাকা৭৯,৯০০ টাকা
১.৫ টন এসি৭৪,৯৯০ টাকা৯০,০০০ টাকা
২ টন এসি৯২,০০০ টাকা১,২২৪০০ টাকা
ইনভার্টার এসির সুবিধাসমূহ
  1. শক্তি সাশ্রয়: ইনভার্টার এসি বিদ্যুৎ খরচে প্রায় ৩০% পর্যন্ত সাশ্রয় করতে পারে।
  2. দীর্ঘস্থায়ী আরাম: এটি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে অধিক স্থিতিশীল এবং সুসংগত আরাম প্রদান করে।
  3. কম শব্দ: ইনভার্টার এসি সাধারণ নন-ইনভার্টার এসির তুলনায় কম শব্দ উৎপাদন করে।
  4. দীর্ঘমেয়াদী টেকসইতা: কম্প্রেসরের উপর চাপ কম পড়ায় এটির মেশিনেরিতে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়, যা দীর্ঘমেয়াদী পরিচালনায় সাহায্য করে।

এসি কেনার টিপস

  1. শক্তি দক্ষতা: যে এসি বেশি শক্তি দক্ষতা রেটিং পেয়েছে সেটি বেছে নিন।
  2. কুলিং ক্ষমতা: ঘরের আকার অনুযায়ী কুলিং ক্ষমতা বেছে নিন।
  3. ব্র্যান্ড ও ওয়ারেন্টি: ভালো ব্র্যান্ড এবং দীর্ঘ ওয়ারেন্টি পিরিয়ড যুক্ত পণ্য কেনার চেষ্টা করুন।
  4. ইনস্টলেশন ও সার্ভিস: যে কোম্পানি ভালো ইনস্টলেশন ও পরবর্তী সার্ভিস দিতে পারে সেই ব্র্যান্ডের পণ্য কেনার কথা ভাবুন।

শেষ কথা

২০২৪ সালে বাংলাদেশের বাজারে এসির দাম ও চাহিদা বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করবে। ভোক্তাদের উচিত প্রযুক্তি, এনার্জি এফিসিয়েন্সি, এবং মূল্য-সাশ্রয়ের দিক থেকে সঠিক এসি বাছাই করা। উপযুক্ত ব্র্যান্ড এবং মডেল নির্বাচন করে গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে সুখকর আশ্রয় নিশ্চিত করা সম্ভব। গ্রীষ্মের তীব্রতা থেকে মুক্তি পেতে এসি ক্রয় একটি বিবেচ্য বিষয়। বাজারে উপলব্ধ বিভিন্ন ধরনের এসি এবং ব্র্যান্ডের মধ্যে সঠিক নির্বাচন করে আপনি আপনার ঘরের পরিবেশকে আরও শীতল ও আরামদায়ক করতে পারেন। এসি ক্রয়ের আগে প্রযুক্তি, ব্র্যান্ড, বাজেট, এবং বিদ্যুৎ খরচের বিবেচনা অবশ্যই করা উচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top