অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা ২০২৪

অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা

অস্ট্রেলিয়া, ওশেনিয়া মহাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র, যে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং উন্নতমানের জীবনযাত্রার জন্য পরিচিত। অনেক মানুষেরই ইচ্ছা রয়েছে এই দেশটিতে ভ্রমণ বা কাজের জন্য যাওয়া। তবে, অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া বর্তমানে অনেক চ্যালেঞ্জিং। অনেকেই কাজের উদ্দেশ্যে অস্ট্রেলিয়া যেতে চান, কিন্তু সবার জন্য তা সহজলভ্য নয়। প্রতিবছর অস্ট্রেলিয়া সরকারিভাবে শ্রমিক নিয়োগ করে থাকে। সরকারি সার্কুলার অনুযায়ী আপনি অস্ট্রেলিয়া ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই নিবন্ধে, আমরা আপনাকে অস্ট্রেলিয়ায় কাজের ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করবো।

অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা

অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন ধরণের কাজের ভিসা পাওয়া যায়, যা বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করার সুযোগ প্রদান করে। নিম্নে কিছু উল্লেখযোগ্য ভিসার ধরণ উল্লেখ করা হল:

১. Temporary Skill Shortage (TSS) Visa (Subclass 482)

এই ভিসাটি অস্থায়ী সময়ের জন্য দক্ষ কর্মী নিয়োগের জন্য ব্যবহার করা হয়। এই ভিসা তিনটি স্ট্রিমে বিভক্ত:

  • Short-term stream: ২ বছর মেয়াদী ভিসা।
  • Medium-term stream: ৪ বছর মেয়াদী ভিসা, যা স্থায়ী বসবাসের পথ সুগম করতে পারে।
  • Labour Agreement stream: শ্রম চুক্তির ভিত্তিতে প্রাপ্ত ভিসা।

২. Employer Nomination Scheme (ENS) Visa (Subclass 186)

এই ভিসাটি স্থায়ী বসবাসের অনুমতি প্রদান করে এবং এটি তিনটি স্ট্রিমে বিভক্ত:

  • Direct Entry stream: যোগ্যতা এবং দক্ষতার ভিত্তিতে।
  • Temporary Residence Transition stream: যারা ইতিমধ্যে TSS ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করছেন।
  • Labour Agreement stream: শ্রম চুক্তির ভিত্তিতে।

৩. Regional Sponsored Migration Scheme (RSMS) Visa (Subclass 187)

  • এই ভিসাটি আঞ্চলিক এলাকায় কাজ করার জন্য এবং স্থায়ী বসবাসের অনুমতি প্রদান করে।

৪. Working Holiday Visa (Subclass 417)

  • এই ভিসাটি ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী যুবকদের জন্য, যারা কাজ এবং ভ্রমণ উভয় করতে চান।

৫. Skilled Independent Visa (Subclass 189)

  • এই ভিসাটি একটি পয়েন্ট ভিত্তিক ভিসা এবং এটি কোনো নিয়োগকর্তার স্পন্সরশিপ ছাড়াই প্রাপ্তি যায়।

বিভিন্ন সেক্টরে কাজের সুযোগ

অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন সেক্টরে কাজের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। নীচে কিছু উল্লেখযোগ্য সেক্টর এবং তাদের কাজের বিবরণ প্রদান করা হল:

  • কনস্ট্রাকশন কাজঃ অস্ট্রেলিয়ার কনস্ট্রাকশন সেক্টর অত্যন্ত বিকাশমান। এখানে নির্মাণ শ্রমিক, সাইট সুপারভাইজার, এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপক হিসাবে কাজের সুযোগ রয়েছে।
  • মেকানিক্যাল কাজঃ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, গাড়ি মেরামত এবং যন্ত্রাংশ প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন মেকানিক্যাল কাজের সুযোগ রয়েছে।
  • ড্রাইভার এর কাজঃ বিভিন্ন ধরনের ড্রাইভার, যেমন ট্রাক ড্রাইভার, ডেলিভারি ড্রাইভার, এবং পিকআপ ড্রাইভার এর জন্য কাজের সুযোগ রয়েছে।
  • ইলেকট্রিক্যাল কাজঃ ইলেকট্রিশিয়ান, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং ইলেকট্রিক্যাল টেকনিশিয়ান এর জন্য প্রচুর কাজের সুযোগ রয়েছে।
  • লেবার কাজঃ লেবার কাজ, যেমন নির্মাণ সাইটে সহকারী, কারখানায় শ্রমিক এবং গুদামে শ্রমিক হিসাবে কাজের সুযোগ রয়েছে।
  • হোটেল এবং আতিথেয়তা সেক্টরঃ হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং ক্যাফেতে বিভিন্ন পদে কাজের সুযোগ রয়েছে, যেমন রিসেপশনিস্ট, ওয়েটার, শেফ এবং হাউসকিপিং স্টাফ।
  • কৃষি কাজঃ ফসল সংগ্রহ, প্যাকিং এবং কৃষি কাজের জন্য প্রতি বছর প্রচুর শ্রমিক প্রয়োজন হয়।
  • ক্লিনার এর কাজঃ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগত বাড়িতে ক্লিনার এর কাজের সুযোগ রয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা খরচ

অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসার জন্য আবেদন করা একটি জটিল প্রক্রিয়া হতে পারে। তবে সঠিক তথ্য এবং প্রস্তুতির মাধ্যমে আপনি সফলভাবে ভিসা পেতে পারেন। ভিসার খরচ আপনার ভিসার ক্যাটাগরির উপর নির্ভর করে। এখানে আমরা অস্ট্রেলিয়ার কাজের ভিসার খরচ, সরকারি এবং বেসরকারি প্রক্রিয়ার মধ্যে । অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা করাতে চাইলে ৩ লক্ষ থেকে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।

১. সরকারি ভাবে কাজের ভিসা খরচঃ অস্ট্রেলিয়ার কাজের ভিসার খরচ বিভিন্ন ক্যাটাগরির উপর নির্ভর করে। সরকারি ভাবে ভিসা প্রাপ্তি হলে খরচ তুলনামূলকভাবে কম হয়। সর্বোচ্চ তিন লক্ষ টাকার মধ্যে আপনি সরকারি ভাবে অস্ট্রেলিয়ার কাজের ভিসা পেতে পারেন। তবে বেসরকারি ভাবে, বিশেষ করে দালাল অথবা এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলে খরচ অনেক বেশি হতে পারে।

২. বেসরকারি ভাবে কাজের ভিসা খরচঃ বাংলাদেশ থেকে কোনো দালাল অথবা এজেন্সির মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার কাজের ভিসা করতে চাইলে খরচ অনেক বেশি হতে পারে। সাধারণত এই খরচ সর্বনিম্ন ৫ লক্ষ টাকা থেকে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। সময়ের ব্যবধানে এবং এজেন্সির শর্তাবলীর উপর ভিত্তি করে এই খরচ পরিবর্তিত হতে পারে।

অস্ট্রেলিয়া কাজের বেতন কত

অস্ট্রেলিয়ার কর্মসংস্থান নীতিমালা বেশ সুসংহত এবং বিভিন্ন দেশের তুলনায় একটু ভিন্ন। অস্ট্রেলিয়াতে প্রতি ঘন্টা অনুযায়ী বেতন প্রদান করা হয় এবং এখানে সবার জন্য নির্দিষ্ট সর্বনিম্ন মজুরি নীতিমালা রয়েছে যা সারা দেশব্যাপী প্রযোজ্য। তবে, কর্মীর বয়স এবং কর্মস্থলের ধরন অনুযায়ী কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। অস্ট্রেলিয়ায় বর্তমান সর্বনিম্ন কাজের মজুরি প্রতি ঘন্টায় ২৩.২৩ অস্ট্রেলিয়ান ডলার। এটি একটি মানদণ্ড যা সারা দেশে কার্যকর এবং এটি কর্মীদের ন্যায্য পারিশ্রমিক নিশ্চিত করে। এই বেতন কাঠামোটি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, জীবনযাত্রার মান, এবং অন্যান্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক ফ্যাক্টরগুলো বিবেচনায় রেখে নির্ধারিত হয়। যারা ২১ বছরের কম বয়সী তাদের জন্য এই সর্বনিম্ন মজুরি কিছুটা কম রাখা হয়েছে। এদের ক্ষেত্রে, প্রতি ঘন্টায় সর্বনিম্ন বেতন হলো ১৫.২৩ অস্ট্রেলিয়ান ডলার। এই নীতির মূল লক্ষ্য হলো যুবকর্মীদের কর্মসংস্থানে উৎসাহিত করা এবং তাদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করা। অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন কাজের জন্য বেতন কাঠামো ভিন্ন। আপনার অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে বেতন নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত নতুনদের ক্ষেত্রে ৪০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পাওয়া যায়। অভিজ্ঞতার সাথে বেতন বৃদ্ধি পায় এবং ওভারটাইম করলে ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বেতন উত্তোলন করা যায়।

অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ কর্মীরা সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজ করতে পারেন। এই সময়সীমার মধ্যে তাদের সব কাজ সম্পন্ন করতে হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত সময় কাজ করলে তারা অতিরিক্ত পারিশ্রমিক পায় যা সাধারণত তাদের নিয়মিত মজুরির দেড় বা দ্বিগুণ হতে পারে। অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষার্থীরা পার্টটাইম কাজ করার সুযোগ পায়। তবে, শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ২০ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে পারবে না। এটি তাদের পড়াশোনার সাথে কাজের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক হয়। এমনকি, ছুটির সময় শিক্ষার্থীরা পূর্ণ সময় কাজ করার অনুমতি পায়, যা তাদের অর্থনৈতিকভাবে সহায়ক হয়।

গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা

দালাল ও এজেন্সি সম্পর্কিত সতর্কতা

  1. বিশ্বাসযোগ্য এজেন্সি নির্বাচন: কোনো এজেন্সি বা দালালের মাধ্যমে ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চাইলে, অবশ্যই তাদের বিশ্বস্ততা এবং পূর্বের কাজ সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন।
  2. চুক্তিপত্র পরীক্ষা করুন: এজেন্সির সাথে চুক্তিপত্র সই করার আগে সব শর্তাবলী ভালোভাবে পড়ে নিন এবং যাচাই করুন।
  3. প্রমাণ সংগ্রহ করুন: সব প্রক্রিয়ার প্রমাণ এবং নথি সংগ্রহ করে রাখুন।

শেষ কথা

অনেকেরই স্বপ্ন অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে কাজ করার, তবে সেই স্বপ্ন পূরণ করা সহজ নয়। বর্তমান সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় কাজের ভিসা পাওয়া অনেক কঠিন। সঠিক তথ্য ও প্রক্রিয়া জানা থাকলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব। আশা করি এই পোস্টটি আপনাকে অস্ট্রেলিয়ায় কাজের ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দিয়েছে। আমাদের ওয়েবসাইটে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে আমাদের সাথে থাকুন। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top