কানাডা, বাংলাদেশের হাজারো তরুণের জন্য স্বপ্নের দেশ হিসেবে বিবেচিত। শুধুমাত্র বাংলাদেশের তরুণরাই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করার, পড়াশোনা করার কিংবা চাকরি করার ইচ্ছা পোষণ করেন। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে কানাডা সরকার অভিবাসন, শিক্ষাগত ভিসা, এবং কাজের ভিসার নিয়মাবলী কঠোর করেছে। ফলে, কানাডায় যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন এবং বিধি-নিষেধ মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করবো কিভাবে আপনি কানাডা ভিসার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন এবং কী কী যোগ্যতা থাকা দরকার।
কানাডায় যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা কেন আপনি কানাডা যেতে চান?
আপনি কেন কানাডায় যেতে চান সেটি বুঝতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন কারণে মানুষ কানাডায় যাওয়ার চিন্তা করে। নিচে কিছু প্রধান কারণ উল্লেখ করা হলো:
১. উচ্চ শিক্ষার জন্যঃ কানাডার শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত এবং বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। অনেক শিক্ষার্থী উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করতে চান।
২. উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় অভিবাসনঃ কানাডা একটি উন্নত দেশ, যেখানে জীবনযাত্রার মান এবং সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত ভালো। তাই অনেকেই উন্নত জীবনের সন্ধানে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চান।
৩. চাকরি ও অর্থনৈতিক উন্নতিঃ কানাডায় কাজ করার সুযোগ ও আয় বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। তাই অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য অনেকেই কানাডায় কাজ করতে আগ্রহী।
৪. পর্যটনঃ প্রকৃতির সৌন্দর্য্য ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতি উপভোগ করার জন্য অনেকেই কানাডায় ভ্রমণ করতে চান।
আরো পড়ুনঃ কানাডা ভিসার দাম কত
কানাডা যাওয়ার যোগ্যতা
আপনি কোন কারণে কানাডায় যেতে চান তার ওপর ভিত্তি করে ভিসার ধরন এবং প্রয়োজনীয় যোগ্যতাগুলো ভিন্ন হবে। নিচে আমরা বিভিন্ন ধরণের ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতাগুলো বিশদভাবে আলোচনা করেছি:
১. কানাডা স্টুডেন্ট ভিসার যোগ্যতা
যারা কানাডায় উচ্চশিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে যেতে চান তাদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা এবং ডকুমেন্টস প্রয়োজন। এগুলো হলো:
- বৈধ পাসপোর্ট: আপনার পাসপোর্ট বৈধ হতে হবে, এবং মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আবেদন জমা দিতে হবে।
- সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি: ছবি হতে হবে সর্বশেষ এবং নির্ধারিত মাপের।
- আইইএলটিএস (IELTS) স্কোর: আপনার আইইএলটিএস পরীক্ষায় কমপক্ষে ৬ স্কোর থাকতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে, উচ্চতর স্কোর প্রয়োজন হতে পারে।
- কানাডার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাডমিশন লেটার: আপনাকে একটি কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে এবং সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার পেতে হবে।
- আগে অধ্যায়নরত প্রতিষ্ঠানের সনদপত্র: পূর্ববর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া সনদের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে।
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট: আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হবে, যাতে প্রমাণিত হয় যে আপনি আপনার পড়াশোনার খরচ বহন করতে সক্ষম।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট: আপনার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা না থাকার প্রমাণস্বরূপ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।
- করোনা ভাইরাসের টিকা কার্ড: আপনি কোভিড-১৯ এর টিকা নিয়েছেন কিনা, সেটি প্রমাণস্বরূপ টিকা কার্ড জমা দিতে হবে।
২. ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা
যারা কানাডায় কাজ করতে চান তাদের জন্য কিছু বিশেষ যোগ্যতা এবং ডকুমেন্টস দরকার। এগুলো হলো:
- বৈধ পাসপোর্ট: আপনার পাসপোর্ট বৈধ হতে হবে।
- জাতীয় পরিচয়পত্র: সব বয়সীদের জন্য প্রয়োজন না হলেও, এটি প্রয়োজনীয় হতে পারে।
- জন্ম নিবন্ধন সনদ: আপনার জন্ম নিবন্ধনের সনদ প্রয়োজন হবে।
- কানাডা ভিসা আবেদন ফরম: সঠিকভাবে পূরণকৃত আবেদনপত্র জমা দিতে হবে।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট: আপনার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা না থাকার প্রমাণস্বরূপ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট: আপনার অর্থনৈতিক সক্ষমতা প্রমাণের জন্য ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হবে।
- করোনা ভাইরাসের টিকা কার্ড: কোভিড-১৯ এর টিকা গ্রহণের প্রমাণ হিসেবে টিকা কার্ড জমা দিতে হবে।
৩. টুরিস্ট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা
যারা কানাডায় পর্যটন করতে চান, তাদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট ডকুমেন্টস এবং যোগ্যতা দরকার:
- কানাডা ভিসা আবেদন ফরম: পূরণকৃত এবং সঠিকভাবে জমা দেয়া আবেদনপত্র।
- বৈধ পাসপোর্ট: আপনার পাসপোর্ট বৈধ হতে হবে।
- হোটেল বুকিং ডকুমেন্টস: কানাডায় অবস্থানের সময়কালে আপনার হোটেল বুকিংয়ের প্রমাণপত্র।
- জাতীয় পরিচয়পত্র: পরিচয় প্রমাণের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট: আপনার ফৌজদারি রেকর্ড না থাকার প্রমাণ।
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট: আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনি আপনার ভ্রমণ খরচ বহন করতে সক্ষম।
- করোনা ভাইরাসের টিকা কার্ড: টিকা কার্ড জমা দিতে হবে।
- জন্ম নিবন্ধন সনদ: আপনার জন্ম নিবন্ধনের সনদ জমা দিতে হবে।
- পূর্ববর্তী ভ্রমণের ডকুমেন্টস: যদি আপনি পূর্বে কোনো দেশ ভ্রমণ করে থাকেন, তার ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে।
কানাডা যাওয়ার খরচ
বাংলাদেশ থেকে কানাডায় যাওয়ার জন্য খরচ প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা হয়ে থাকে। তবে, আপনার ভিসার ধরন এবং অন্যান্য ব্যয়ের ওপর ভিত্তি করে এই খরচ বাড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি, আবাসন, এবং অন্যান্য খরচ যোগ করতে হবে।
সহজে কানাডায় যাওয়ার উপায়
কানাডায় সহজে যাওয়ার উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আপনার কোনো আত্মীয়-স্বজন কানাডায় থাকলে তাদের মাধ্যমে যোগাযোগ করা। এর মাধ্যমে আপনার জন্য কানাডায় যাওয়া এবং সেখানে থাকার ব্যবস্থা সহজ হতে পারে।
সরকারিভাবে কানাডায় যাওয়ার উপায়
সরকারিভাবে কানাডায় যেতে চাইলে, আপনাকে বিএমইটি (ব্র্যাক মাইগ্রেশন রিসোর্স সেন্টার) কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে হবে। এখানে আপনার দক্ষতা অনুযায়ী আপনি ভিসার আবেদন করতে পারবেন। যদিও সরকারিভাবে যাওয়ার ক্ষেত্রে খরচ কম হয়, তবে এতে সময় বেশি লাগতে পারে।
আরো পড়ুনঃ সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায়
শেষ কথা
কানাডা যাওয়ার ইচ্ছা পূরণ করার জন্য আপনার সঠিক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি থাকতে হবে। ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ এবং জটিল হতে পারে, তবে যদি আপনি প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন এবং সমস্ত নিয়ম ও শর্তাবলী মেনে চলতে পারেন, তাহলে আপনার জন্য কানাডায় যাওয়ার দরজা খুলে যাবে। তাই, আপনার লক্ষ্য যাই হোক না কেন, সতর্কভাবে প্রস্তুতি নিন এবং নিজেকে যোগ্য করে তুলুন।