বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং আকর্ষণীয় দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান শীর্ষে। দেশটি কেবল তার অর্থনৈতিক শক্তির জন্যই নয়, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার জন্যও প্রশংসিত। শিক্ষার অবারিত সুযোগ, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে কাজের সম্ভাবনা, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের কারণে লাখো মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে আসতে আগ্রহী। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে অনেকেই বিভিন্ন ভিসা ক্যাটাগরির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার খরচ এবং ভিসার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানা না থাকলে এই স্বপ্নপূরণ কঠিন হতে পারে।এই নিবন্ধে আমরা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার বিভিন্ন ভিসার খরচ, প্রয়োজনীয় নথিপত্র এবং বিমান ভাড়াসহ বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আলোচনা করব।
আমেরিকা ভিসার দাম কত
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিসার সুযোগ রয়েছে। প্রতিটি ভিসার প্রয়োজনীয়তা, খরচ এবং শর্তাবলী ভিন্ন হতে পারে। নিচে আমরা প্রধান ভিসাগুলোর ধরন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
১. স্টুডেন্ট ভিসা (Student Visa)
কেন প্রয়োজন?
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী স্টুডেন্ট ভিসা (F-1) আবেদন করে থাকে। যারা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করতে চান, তাদের জন্য এই ভিসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্টুডেন্ট ভিসা পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই স্বীকৃত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে।
আবেদনের খরচ
বাংলাদেশ থেকে স্টুডেন্ট ভিসা পেতে হলে আবেদন ফি হিসেবে ১৪,০০০ টাকা প্রয়োজন হয়। এছাড়াও SEVIS (Student and Exchange Visitor Information System) ফি দিতে হয়, যা প্রায় ৩৫০ ডলার (প্রায় ৩০,০০০ টাকা)।
প্রয়োজনীয় যোগ্যতা
- একাডেমিক ফলাফল: আপনার পূর্ববর্তী শিক্ষাজীবনের ভালো ফলাফল থাকতে হবে।
- ইংরেজি দক্ষতা: উচ্চ আইইএলটিএস (IELTS) বা টোফেল (TOEFL) স্কোর থাকতে হবে। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে IELTS স্কোর ৬.৫ বা তার বেশি থাকতে হয়।
- বিজ্ঞ নথি: পাসপোর্ট, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট, আর্থিক স্থিতি প্রমাণপত্র ইত্যাদি নথিপত্র জমা দিতে হয়।
আবেদনের প্রক্রিয়া
স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে প্রথমে https://bd.usembassy.gov/visas/ ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে। এরপর সাক্ষাৎকারের জন্য দূতাবাসে সময় নির্ধারণ করতে হবে। সাক্ষাৎকারে উপস্থিত হওয়ার সময় সকল নথিপত্র এবং ফি জমা দিতে হবে।
২. ওয়ার্ক ভিসা (Work Visa)
কেন প্রয়োজন?
যারা যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান করতে চান, তাদের জন্য ওয়ার্ক ভিসা প্রয়োজন। H-1B, L-1, O-1, এবং E-2 সহ বিভিন্ন ধরনের কাজের ভিসা রয়েছে, যা কর্মক্ষেত্রের ধরণ অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। উচ্চ প্রযুক্তি, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং গবেষণা সহ নানা ক্ষেত্রের পেশাজীবীরা এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।
আবেদনের খরচ
বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওয়ার্ক ভিসা (কাজের ভিসা) পেতে প্রায় ১৭,০০০ টাকা খরচ হয়। তবে, কোম্পানি বা নিয়োগকর্তার পক্ষ থেকে কিছু ক্ষেত্রে খরচ বহন করা হতে পারে। আবেদন প্রক্রিয়া শেষে ভিসার ধরণ অনুযায়ী বাড়তি খরচও হতে পারে।
প্রয়োজনীয় যোগ্যতা
- কাজের অভিজ্ঞতা: নির্দিষ্ট চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
- প্রয়োজনীয় নথিপত্র: পাসপোর্ট, কাজের প্রস্তাব পত্র, শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট, কাজের অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্র ইত্যাদি নথিপত্র জমা দিতে হবে।
আবেদনের প্রক্রিয়া
কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে আপনাকে নিয়োগকর্তার কাছ থেকে চাকরির প্রস্তাব পেতে হবে। নিয়োগকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন বিভাগে আবেদন করবে এবং আপনার আবেদন পর্যালোচনা করা হবে। ভিসা মঞ্জুর হলে আপনাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।
৩. ট্যুরিস্ট ভিসা (Tourist Visa)
কেন প্রয়োজন?
যারা যুক্তরাষ্ট্রে অস্থায়ীভাবে ভ্রমণ করতে চান, তাদের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা প্রয়োজন। এই ভিসার মাধ্যমে ভ্রমণকারীরা যুক্তরাষ্ট্রে ৬ মাস পর্যন্ত অবস্থান করতে পারেন। তবে, এই ভিসার মাধ্যমে কাজ করা বা পড়াশোনা করা যায় না।
আবেদনের খরচ
বাংলাদেশ থেকে ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে ১৪,০০০ টাকা ফি প্রদান করতে হবে।
প্রয়োজনীয় যোগ্যতা
- নথি প্রমাণ: পূর্ববর্তী ভ্রমণ ইতিহাস, যেমন নেপাল, ভারত বা ভুটান ভ্রমণের প্রমাণপত্র থাকতে পারে।
- আর্থিক স্থিতি: আপনার আর্থিক স্থিতি সম্পর্কে প্রমাণ দেখাতে হবে, যাতে বোঝা যায় আপনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের সময় খরচ বহন করতে পারবেন।
আবেদনের প্রক্রিয়া
ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য অনলাইনে DS-160 ফর্ম পূরণ করতে হবে এবং ভিসা সাক্ষাৎকারের সময় নির্ধারণ করতে হবে। প্রয়োজনীয় নথিপত্র এবং ফি প্রদান করার পর দূতাবাসে সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করতে হবে।
৪. মেডিকেল ভিসা (Medical Visa)
কেন প্রয়োজন?
যারা উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান, তাদের জন্য মেডিকেল ভিসা আবশ্যক। যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চমানের হাসপাতালগুলোতে উন্নত চিকিৎসার জন্য অনেকেই এই ভিসার জন্য আবেদন করেন।
আবেদনের খরচ
বাংলাদেশ থেকে মেডিকেল ভিসা পেতে ১৪,০০০ টাকা খরচ হয়। এর পাশাপাশি চিকিৎসার খরচ এবং বিমা খরচ বহন করতে হবে।
প্রয়োজনীয় যোগ্যতা
- মেডিকেল সার্টিফিকেট: বাংলাদেশ থেকে প্রাপ্ত মেডিকেল সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে, যাতে আপনার চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তথ্য থাকবে।
- চিকিৎসার জন্য আমন্ত্রণ পত্র: যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতাল বা চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে আমন্ত্রণ পত্র প্রয়োজন হবে।
আবেদনের প্রক্রিয়া
অনলাইনে DS-160 ফর্ম পূরণ করে এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংযুক্ত করে মেডিকেল ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়। এরপর দূতাবাসে সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করতে হয়।
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ভাড়া
ভিসা পেয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পরবর্তী ধাপ হল বিমান টিকিট কেনা। বিমান ভাড়ার পরিমাণ আপনার গন্তব্যের উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। নিচে কিছু প্রধান শহরের বিমান ভাড়ার পরিসংখ্যান দেওয়া হল:
- ওয়াশিংটন: ১৬০০ থেকে ১৮০০ ডলার
- সিয়াটল: ২১০০ থেকে ২২৫০ ডলার
- ডালাস: ১৮০০ থেকে ১৮৫০ ডলার
- নিউইয়র্ক: ১৪০০ থেকে ১৬০০ ডলার
- শিকাগো: ১৪০০ থেকে ১৬৫০ ডলার
- বোস্টন: ১৫০০ থেকে ২০০০ ডলার
- সান ফ্রান্সিসকো: ১৮০০ থেকে ২০০০ ডলার
- হিউস্টন: ১৭০০ থেকে ১৯০০ ডলার
- লস এঞ্জেলেস: ১৬০০ থেকে ১৯০০ ডলার
শেষ কথা
যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ইচ্ছা অনেকেরই থাকে, তবে এই প্রক্রিয়াটি সহজ নয়। ভিসার জন্য আবেদন করা, সাক্ষাৎকার দেওয়া, প্রয়োজনীয় নথিপত্র জোগাড় করা এবং ভিসার ফি প্রদান করা সবই গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এর পাশাপাশি বিমান ভাড়া এবং অন্যান্য খরচের কথাও মাথায় রাখতে হবে। আপনি যদি যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান, তবে ভিসার ধরন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় নথি এবং যোগ্যতা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে তারপর আবেদন করা উচিত। আশা করি এই নিবন্ধ আপনাকে সহায়ক হবে।