মাল্টা একটি তিনটি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত উন্নত এবং সুন্দর রাষ্ট্র, যা বর্তমানে বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল। অনেকেই সেখানে কাজের ভিসায় গিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন এবং অন্যরা পর্যটন বা শিক্ষার উদ্দেশ্যে সেখানে যান। মাল্টা, একটি উন্নত ও সুন্দর দেশ, যেটি তিনটি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত। বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার শ্রমিক এখানে কাজের ভিসায় এসে জীবিকা নির্বাহ করছে। মাল্টার আর্থিক সুযোগ-সুবিধার জন্য অনেকেই এই দেশে কাজ করতে চান। এ ছাড়াও ভ্রমণ ও পড়াশোনার জন্য অনেকেই মাল্টায় যেতে আগ্রহী। কিন্তু অনেকেই জানেন না মাল্টায় যেতে কত টাকা লাগে এবং সেখানে কাজের বেতন কত হতে পারে। এই লেখায় আমরা মাল্টা ভিসা ও অন্যান্য খরচ এবং বেতনের বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করব।
মাল্টা যেতে কত টাকা লাগে
মাল্টা ভ্রমণ এক ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা হতে পারে, কিন্তু সেখানে যাওয়ার জন্য খরচ সম্পূর্ণ আপনার ভিসার ক্যাটাগরির উপর নির্ভর করে। মাল্টায় যাত্রার খরচ সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে ভিসার ধরন এবং আপনি কোন প্রক্রিয়ায় ভিসা সংগ্রহ করছেন তার উপর। যদি আপনি মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বা কাজের ভিসার জন্য আবেদন করেন, তবে আপনার খরচ ভিজিট ভিসা এবং স্টুডেন্ট ভিসার তুলনায় বেশি হবে। সরকারি এবং বেসরকারি উভয় প্রক্রিয়ায় মাল্টা যাত্রার খরচ ভিন্ন হতে পারে।
সরকারি মাল্টা যেতে কত টাকা লাগে
মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য খরচ সরকারিভাবে কম হলেও বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে বেশি হতে পারে। সরকারিভাবে আবেদন করলে খরচ প্রায় ৪ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, যা বেসরকারি এজেন্সির তুলনায় অনেক কম।
বেসরকারি মাল্টা যেতে কত টাকা লাগে
বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে মাল্টা যাওয়ার খরচ সম্পূর্ণ এজেন্সির উপর নির্ভর করে। কিছু এজেন্সি ৮ লক্ষ টাকার মধ্যেই মাল্টায় পৌঁছে দেয়, আবার কিছু এজেন্সি ভিসা খরচসহ ১২ লক্ষ টাকার মতো খরচ করতে পারে। তাই সঠিক এজেন্সি নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ভিজিট এবং স্টুডেন্ট ভিসার খরচ
মাল্টা ভিজিট ভিসা এবং স্টুডেন্ট ভিসার খরচ তুলনামূলকভাবে কম, যা ৮ লক্ষ থেকে ১২ লক্ষ টাকার মধ্যে হতে পারে। সরকারিভাবে আবেদন করলে এ খরচ আরও কমে আসতে পারে।
খরচ কমানোর উপায়
মাল্টা যাওয়ার খরচ কমানোর জন্য কিছু পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে:
- সরকারিভাবে আবেদন করা
- বিশ্বস্ত এবং প্রমাণিত এজেন্সি নির্বাচন করা
- বিভিন্ন এজেন্সির খরচ তুলনা করা
- সময়মত এবং সঠিকভাবে সব কাগজপত্র প্রস্তুত রাখা
মাল্টার বেতন কত
বাংলাদেশের অনেক মানুষ বর্তমানে জীবিকার তাগিদে মাল্টায় যাচ্ছেন। এই দ্বীপ রাষ্ট্রে কাজের সুযোগ এবং বেতন অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ভালো হওয়ায় এটি কর্মসংস্থানের জন্য জনপ্রিয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।
মাল্টায় কাজের সুযোগ অনেক রকমের। এখানে হোটেল, রেস্টুরেন্ট, কনস্ট্রাকশন, গার্মেন্টস, ড্রাইভিং সহ নানা ধরনের কাজে লোক প্রয়োজন। নিচে মাল্টায় বিভিন্ন ধরণের কাজ এবং তাদের বেতন বিশদভাবে আলোচনা করা হল:
- রেস্টুরেন্ট ও হোটেলঃ মাল্টায় রেস্টুরেন্ট বা হোটেলে কাজ করার জন্য বেতন তুলনামূলকভাবে ভালো হয়। ওয়েটার বা রাধুনীর কাজ করলে মাসে ৭০,০০০ থেকে ১,২০,০০০ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করা সম্ভব।
- কনস্ট্রাকশন ও ইলেকট্রিশিয়ানঃ কনস্ট্রাকশন এবং ইলেকট্রিশিয়ানের কাজে অভিজ্ঞতা থাকলে মাল্টায় মাসে ৮০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করা সম্ভব। এই কাজগুলোতে শারীরিক পরিশ্রম বেশি হলেও বেতন বেশ ভালো।
- গার্মেন্টস ও ক্লিনারঃ গার্মেন্টস এবং ক্লিনারের কাজগুলো সাধারণত কিছুটা কম পরিশ্রমের হয় এবং মাসে ৬০,০০০ থেকে ৯০,০০০ টাকা পর্যন্ত বেতন পাওয়া যায়।
- ড্রাইভিং ও ডেলিভারি ম্যানঃ মাল্টায় ড্রাইভিং এবং ডেলিভারি ম্যানের কাজ খুবই জনপ্রিয়। এই ধরনের কাজের জন্য মাসে ৯০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করা যায়।
- সিভিল ইঞ্জিনিয়ারঃ মাল্টায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন অনেক বেশি। একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার মাসে ১,৫০,০০০ থেকে ২,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারেন।
মাল্টা যেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
মাল্টায় যেতে হলে অবশ্যই বৈধ ভিসার প্রয়োজন। ভিসার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগে, যা নিচে উল্লেখ করা হল:
- বৈধ বাংলাদেশী পাসপোর্ট
- অরিজিনাল ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি
- পাসপোর্টে সর্বনিম্ন দুটি পাতা ফাঁকা থাকা
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
- মেডিকেল সার্টিফিকেট
- করোনা ভ্যাকসিন টিকা কার্ডের অরিজিনাল কপি
ভিসা প্রক্রিয়া
- আবেদন ফরম পূরণ: নির্ধারিত ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জমা দিতে হবে।
- ভিসা ফি প্রদান: নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হবে।
- ভিসা ইন্টারভিউ: প্রয়োজনীয় হলে দূতাবাসে ইন্টারভিউ দিতে হবে।
- ভিসা অনুমোদন: সমস্ত শর্ত পূরণ হলে ভিসা অনুমোদন পাওয়া যাবে।
ভিসা প্রসেসিং সময়কাল বিভিন্ন কারণে পরিবর্তিত হতে পারে। সাধারণত, ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ায় ২ থেকে ৪ সপ্তাহ সময় লাগে। তবে, কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি সময় নিতে পারে।
মাল্টা যাওয়ার সহজ উপায়
মাল্টায় যাওয়া এবং সেখানে বসবাস করা মোটেও কঠিন নয় যদি আপনি সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেন। একটি বৈধ ভিসা, যথাযথ নথিপত্র এবং পরিকল্পনা নিয়ে আপনি সহজেই মাল্টায় পৌঁছে যেতে পারেন এবং একটি নতুন জীবন শুরু করতে পারেন। মাল্টায় সহজ উপায়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন একটি বৈধ ভিসা। ভিসা না থাকলে অনলাইনের মাধ্যমে বা এজেন্সির সাহায্য নিয়ে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। ভিসা প্রসেসিং সম্পন্ন হওয়ার পর খুব সহজেই মাল্টায় যাত্রা করা যাবে।
যদি আপনি নিজে নিজে আবেদন করতে না পারেন বা প্রক্রিয়াটি জটিল মনে করেন, তবে আপনি একটি অনুমোদিত ভিসা এজেন্সির সাহায্য নিতে পারেন। এজেন্সি আপনার জন্য সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দেবে এবং আপনাকে সঠিকভাবে গাইড করবে।
শেষ কথা
বাংলাদেশ থেকে মাল্টায় যাওয়ার খরচ এবং বেতনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আশাকরি, এই লেখাটি আপনাদের মাল্টায় যাত্রার পরিকল্পনা করতে সহায়ক হবে। মাল্টায় বিভিন্ন ধরনের ভিসায় যাওয়ার খরচ এবং কাজের বেতন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেছে বলে মনে করি।