পিজি হাসপাতাল কবে বন্ধ থাকে

পিজি হাসপাতাল, যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (BSMMU) নামে অধিক পরিচিত, বাংলাদেশের অন্যতম উন্নতমানের সরকারি হাসপাতাল। এটি স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে একটি প্রধান কেন্দ্র হিসেবে গণ্য হয়, যেখানে সকল ধরনের রোগের আধুনিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। হাসপাতালটি শুধু রোগ নির্ণয়ে দক্ষ নয়, বরং রোগ নিরাময়ে বিশ্বমানের প্রযুক্তি ও দক্ষতার সংমিশ্রণে সেবা প্রদান করে।

শাহবাগ মোড়ের পশ্চিম পার্শ্বে অবস্থিত এই হাসপাতালটি দেশের সাধারণ জনগণের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ভাতাভোগীদের জন্য জরুরি চিকিৎসা সেবার প্রধান স্থান। উন্নত চিকিৎসা সেবা, আধুনিক সরঞ্জাম এবং নির্ভুল রোগ নির্ণয় ব্যবস্থা পিজি হাসপাতালকে একটি বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এখানে রাতদিন ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়। চলুন বিস্তারিত আলোচনা করা যাক এই হাসপাতালের বিভিন্ন দিক নিয়ে।

পিজি হাসপাতাল কবে বন্ধ থাকে

বেশিরভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মতোই, পিজি হাসপাতালেও নির্দিষ্ট ছুটির ব্যবস্থা রয়েছে। সাধারণত এই হাসপাতালের জন্য নির্ধারিত কোনো মাসিক ছুটি নেই। তবে সপ্তাহের একটি দিন—শুক্রবার—হাসপাতালটি বন্ধ থাকে। এছাড়াও, বিভিন্ন জাতীয় ও ধর্মীয় উৎসব যেমন ঈদ, পূজা, বা স্বাধীনতা দিবসের মতো বিশেষ দিনগুলোতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী হাসপাতাল বন্ধ থাকতে পারে।

পিজি হাসপাতালের সাপ্তাহিক ও মাসিক ছুটির বিবরণ

মাসিক ছুটি

প্রতি সপ্তাহে একবার, শুক্র বার পিজি হাসপাতাল বন্ধ থাকে। এই হিসাবে প্রতি মাসে মোট ৪ দিন হাসপাতালটি সাপ্তাহিক ছুটির কারণে বন্ধ থাকে। এছাড়া, যেসব মাসে বিশেষ উৎসব বা ছুটি পড়ে, সে সময় সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী হাসপাতাল বন্ধ থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো মাসে ২ দিন সরকারি ছুটি থাকে, তাহলে সেই মাসে মোট ৬ দিন পিজি হাসপাতাল বন্ধ থাকবে।

খোলা থাকার সময়সূচি

পিজি হাসপাতাল শনি থেকে বৃহস্পতি সপ্তাহে ৬ দিন খোলা থাকে। এই ৬ দিনে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সেবা প্রদান করা হয়। প্রতি সপ্তাহে ২৬ দিন পিজি হাসপাতাল খোলা থাকায়, যে কোনো সময়ে রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিতে আসতে পারেন। বিভিন্ন সেবা বিভাগের জন্য কর্মরত নার্স ও ডাক্তারদের কাজের সময় ভাগ করা থাকে। চিকিৎসকরা ১২ ঘণ্টার শিফটে কাজ করেন, যা রোগীদের সেবা গ্রহণের জন্য সুবিধাজনক।

পিজি হাসপাতালের কেবিন ও বেড ভাড়ার বিবরণ

পিজি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের কেবিন ও বেডের ব্যবস্থা রয়েছে। হাসপাতালের এই অংশটি রোগীর আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্য বিবেচনা করে সাজানো হয়েছে। এখানে রোগীদের জন্য ৪ ধরনের বেড ও কেবিন রয়েছে, যা রোগীর প্রয়োজন অনুসারে নির্ধারণ করা হয়।

১. জেনারেল ওয়ার্ড

জেনারেল ওয়ার্ড হল সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যের সেবা। এখানে ৭ থেকে ১০ টি বেড থাকে এবং প্রতিদিনের ভাড়া মাত্র ৬০০ টাকা। যারা সাধারন চিকিৎসা নিতে চান এবং বেশি খরচ করতে চান না, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ বিকল্প।

২. ডাবল বেড কেবিন

ডাবল বেড কেবিনে উন্নতমানের সেবা পাওয়া যায়। প্রতিটি কেবিনে দুটি বেড থাকে, এবং প্রতিদিনের ভাড়া ১০২৫ টাকা। এ ধরনের কেবিনগুলোতে আরামের জন্য উন্নতমানের ব্যবস্থা রয়েছে।

৩. একক বেড কেবিন

এটি আরও বেশি ব্যক্তিগত এবং একান্ত সেবা চাহিদা সম্পন্ন রোগীদের জন্য উপযুক্ত। প্রতিটি কেবিনে মাত্র একটি বেড থাকে, এবং এর দৈনিক ভাড়া ২০৫০ টাকা। এখানে রোগী আরও সুনিশ্চিত ব্যক্তিগত চিকিৎসা সেবা পেতে পারে।

৪. ডিলাক্স রুম

পিজি হাসপাতালের সবচেয়ে উন্নতমানের রুম হলো ডিলাক্স রুম। এর ভাড়া অন্যান্য রুমের তুলনায় বেশি, প্রতিদিনের ভাড়া ৩০০০ টাকা। যারা সেরা আরাম এবং উন্নতমানের সেবা চান, তাদের জন্য এই রুম আদর্শ।

পিজি হাসপাতালে রোগী ভর্তি করার নিয়মাবলী

অনেকেই জানতে চান কিভাবে পিজি হাসপাতালে রোগী ভর্তি করানো যায়। বর্তমান সময়ে সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি করানো অনেক সহজ হয়েছে। পিজি হাসপাতালে রোগী ভর্তি করানোর দুইটি পদ্ধতি রয়েছে: সরাসরি এবং অনলাইনে।

১. সরাসরি ভর্তি

সরাসরি ভর্তি করানোর পদ্ধতিতে রোগী এবং তার পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালের রিসেপশনে গিয়ে কাগজপত্র জমা দিয়ে সিট বুক করতে পারেন। এটি বেশ সহজ এবং প্রায় সময়ই ঝামেলামুক্ত থাকে।

২. অনলাইন ভর্তি

অনলাইনে রোগী ভর্তি করানোর ব্যবস্থা আরও সহজ এবং সময় বাঁচায়। পিজি হাসপাতালের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (bsmmu.edu.bd) থেকে অনলাইনে টিকিট বুকিং করা সম্ভব। এছাড়া, কিছু থার্ড পার্টি ওয়েবসাইটও পিজি হাসপাতালের সিট বুকিং সেবা প্রদান করে। তবে অনলাইন বুকিং এ খরচ কিছুটা বেশি হতে পারে।

পিজি হাসপাতালের জরুরি সেবা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা

যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে পিজি হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগের সেবা ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে এবং সেখান থেকে রোগী ভর্তি ও চিকিৎসা সেবা দ্রুততম সময়ে প্রদান করা হয়।

জরুরি যোগাযোগের নাম্বারসমূহ

নিম্নে পিজি হাসপাতালের কিছু জরুরি যোগাযোগ নাম্বার দেওয়া হলো:

    • 8-02-961051-58
    • 8-02-961058-60
    • 6-02-614545-49
    • 6-02-612550-54

এই নাম্বারগুলোতে কল করে সেবা সংক্রান্ত তথ্য এবং সিট বুকিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। জরুরি অবস্থায় তাৎক্ষণিক সেবা পেতে এই নাম্বারগুলো অত্যন্ত কার্যকরী।

হাসপাতালের সেবা গুণমান ও রোগীর সন্তুষ্টি

পিজি হাসপাতাল রোগী সন্তুষ্টির ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বারোপ করে। এখানে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে, এবং অধিকাংশই তাদের সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে। আধুনিক যন্ত্রপাতি, দক্ষ চিকিৎসক, এবং প্রশিক্ষিত নার্সদের সমন্বয়ে গঠিত পিজি হাসপাতালের সেবায় কোনো ঘাটতি নেই। উন্নতমানের কেবিন, জরুরি সেবা, এবং নির্ভুল রোগ নির্ণয়ের সক্ষমতা এই হাসপাতালকে বিশেষায়িত করে তুলেছে।

পিজি হাসপাতালের সেবা গ্রহণের সুবিধা

১. ২৪ ঘণ্টা সেবা: পিজি হাসপাতাল দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে, তাই আপনারা যেকোনো সময় এখানে চিকিৎসা নিতে আসতে পারবেন।

২. উন্নত চিকিৎসা সরঞ্জাম: আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং প্রযুক্তির ব্যবহার হাসপাতালটির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।

৩. কেবিনের বৈচিত্র্য: রোগীর আরাম এবং প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন ধরনের কেবিন ও বেডের ব্যবস্থা রয়েছে।

  1. অর্থনৈতিক সাশ্রয়: এই হাসপাতালটি সরকার দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় এর সেবার মূল্য সাধারণ মানুষের জন্য বেশ সাশ্রয়ী।
  2. অনলাইন সেবা: অনলাইনে সিট বুকিং এবং রোগী ভর্তি করানোর সুবিধা থাকার কারণে দ্রুততম সময়ে সেবা পাওয়া যায়।

শেষ কথা

পিজি হাসপাতাল (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) দেশের স্বাস্থ্যসেবায় একটি অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান। উন্নত চিকিৎসা, প্রশিক্ষিত ডাক্তার ও নার্স, এবং নির্ভুল রোগ নির্ণয় ব্যবস্থার কারণে এটি সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। যেকোনো জরুরি অবস্থায়, এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি করানো সহজ এবং সেবা পাওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুততর।

আশা করি, এই বিস্তারিত পোস্ট থেকে পিজি হাসপাতালের ছুটি, খোলার সময়সূচি, রোগী ভর্তি প্রক্রিয়া, এবং সেবার মান সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেয়েছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top