বাঙালিদের রান্নাঘরের অপরিহার্য অংশ হল রাইস কুকার। ভাত রান্নার ঝামেলা কমাতে এবং সময় বাঁচাতে রাইস কুকারের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ড, মডেল, ক্ষমতা এবং বৈশিষ্ট্যের রাইস কুকার পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে, রাইস কুকার একটি অপরিহার্য রান্নার সরঞ্জাম। দ্রুত এবং সহজে ভাত রান্নার জন্য এটি প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ব্যবহৃত হয়। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এবং বিভিন্ন দামের রাইস কুকার পাওয়া যায়। প্রতিদিনের খাবার তৈরির এই যন্ত্রটি সময় ও শ্রম সাশ্রয় করে থাকে । বাজারে রাইস কুকারের দাম নির্ধারণ নানান ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে। এই পোস্টে, আমরা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রাইস কুকারের দাম, ফিচার এবং বাজারে তাদের স্থানের উপর একটি বিস্তারিত আলোচনা করবো।
রাইস কুকারের বিভিন্ন ধরণের মডেল ও তাদের বৈশিষ্ট্য
১. বেসিক রাইস কুকার: বেসিক মডেলগুলো সাধারণত ছোট পরিবারের জন্য উপযুক্ত এবং এগুলোর দাম অপেক্ষাকৃত কম। এই ধরণের রাইস কুকারে ভাত রান্না ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের লাইট খাবার তৈরি করা যায়।
২. মাল্টি-ফাংশনাল রাইস কুকার: এই মডেলগুলো বহুমুখী কাজ করতে সক্ষম, যেমন: ভাপে খাবার রান্না, স্টু বা স্যুপ তৈরি। এই ধরনের রাইস কুকারের দাম একটু বেশি হতে পারে কিন্তু এর বহুমুখী ব্যবহার এটি অনেকের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে।
৩. ইন্ডাকশন হিটিং রাইস কুকার: এই প্রযুক্তি সমৃদ্ধ রাইস কুকারগুলো ভাত রান্নার সময় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে আরো ভালো মানের ভাত তৈরি করে। ইন্ডাকশন মডেলগুলো সাধারণত দামে বেশি হয়ে থাকে।
রাইস কুকারের ধরণ
- নন-স্টিক রাইস কুকার: এই ধরণের রাইস কুকারের পাত্রে নন-স্টিক কোটিং থাকে যা ভাতকে পাত্রে লেগে যাওয়া থেকে রোধ করে।
- স্টেইনলেস স্টিল রাইস কুকার: এই ধরণের রাইস কুকারের পাত্র স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে তৈরি। এগুলি টেকসই এবং পরিষ্কার করা সহজ।
- প্রেসার কুকার রাইস কুকার: এই ধরণের রাইস কুকার প্রেসার কুকার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। এগুলি দ্রুত ভাত রান্না করতে পারে।
- মাল্টি-ফাংশন রাইস কুকার: এই ধরণের রাইস কুকার বিভিন্ন ধরণের খাবার রান্না করতে ব্যবহার করা যায়।
রাইস কুকার দাম কত
রাইস কুকারের দাম বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও মডেল অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত, বেসিক মডেলগুলোর দাম ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। মাল্টি-ফাংশনাল ও ইন্ডাকশন মডেলগুলোর দাম আরো বেশি, যা ৫০০০ থেকে ৩০০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।
কিছু জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের রাইস কুকারের দাম
ওয়ালটন রাইস কুকারের দাম কত
ভিশন রাইস কুকার | দাম টাকা |
১.০ লিটার | ১,৬০০ টাকা |
১.৮ লিটার | ২,৩০০ টাকা |
২.২ লিটার | ২,৭০০ টাকা |
ভিশন রাইস কুকারের দাম কত
ভিশন রাইস কুকার | দাম টাকা |
১.০ লিটার | ১,৮৫০ টাকা |
১.৮ লিটার | ২,৫৫০ টাকা |
২.২ লিটার | ২,৯৩২ টাকা |
সিঙ্গার রাইস কুকারের দাম কত
ভিশন রাইস কুকার | দাম টাকা |
১.০ লিটার | ১,৪০০ টাকা |
১.৮ লিটার | ২,১০০ টাকা |
২.২ লিটার | ২,৫০০ টাকা |
মিয়াকো রাইস কুকারের দাম কত
ভিশন রাইস কুকার | দাম টাকা |
১.০ লিটার | ১,৭০০ টাকা |
১.৮ লিটার | ২,৪০০ টাকা |
২.২ লিটার | ২,৮০০ টাকা |
ন্যাশনাল রাইস কুকারের দাম কত
ভিশন রাইস কুকার | দাম টাকা |
১.০ লিটার | ১,৫০০ টাকা |
১.৮ লিটার | ২,২০০ টাকা |
২.২ লিটার | ২,৬০০ টাকা |
বাংলাদেশের বাজারে জনপ্রিয় কিছু মডেলের রাইস কুকারের দাম
ব্র্যান্ড | মডেল | ক্যাপাসিটি | দাম (৳) |
---|---|---|---|
ওয়ালটন | RK-101 | ১ লিটার | ১,৪০০ টাকা |
ভিশন | RC-1806 | ১.৮ লিটার | ২,৪৫০ টাকা |
মিয়াকো | MK-301 | ২.৮ লিটার | ৩,৪০০ টাকা |
ন্যাশনাল | SR-18JS1 | ১.৮ লিটার | ২,৯০০ টাকা |
ফিলিপস | HD3035/00 | ১.৮ লিটার | ৩,২০০ টাকা |
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রাইস কুকার ও তাদের বৈশিষ্ট্য
বাংলাদেশের বাজারে অনেক ব্র্যান্ডের রাইস কুকার পাওয়া যায়। যেমন- Panasonic, Philips, Walton, Vision ইত্যাদি। এই ব্র্যান্ডগুলি বিভিন্ন মডেলের রাইস কুকার প্রদান করে থাকে যা ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুসারে ডিজাইন করা হয়েছে।
- Panasonic: Panasonic রাইস কুকারগুলি তাদের দীর্ঘস্থায়ি এবং শক্তিসাশ্রয়ী বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। এদের অনেকগুলি মডেলে অতিরিক্ত ফাংশন যেমন স্টিম কুকিং, সুপ ও কেক বানানোর সুবিধা থাকে।
- Philips: Philips রাইস কুকারগুলি তাদের উন্নত তাপ প্রযুক্তি এবং সহজ পরিষ্কারের সুবিধার জন্য বিখ্যাত। তাদের কিছু মডেলে 3D হিটিং প্রযুক্তি থাকে যা চালের সমান রান্না নিশ্চিত করে।
- Walton: Walton রাইস কুকারগুলি বাংলাদেশের বাজারে একটি জনপ্রিয় নাম। তারা বিভিন্ন সাইজ এবং বাজেটের মধ্যে মডেল প্রদান করে থাকে।
- Vision: Vision রাইস কুকারগুলি তাদের সাশ্রয়ী দাম এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের গ্যারান্টির জন্য পরিচিত।
রাইস কুকার ব্যবহারের সুবিধা
- দ্রুত এবং সহজে ভাত রান্না: রাইস কুকার ব্যবহারে ভাত রান্না করতে খুব কম সময় লাগে এবং এটি খুব সহজ।
- ভাত পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম: রাইস কুকার ব্যবহারে ভাত পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
- পুষ্টিকর ভাত রান্না: রাইস কুকারে ভাত রান্না করলে ভাতের পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে।
- বিভিন্ন ধরণের খাবার রান্না: কিছু রাইস কুকারে বিভিন্ন ধরণের খাবার রান্না করা যায়।
রাইস কুকার কেনার সময় কিছু টিপস
- ব্যবহারের সহজতা: রাইস কুকার ব্যবহারে সহজ হওয়া উচিত। অনেক মডেলে ডিজিটাল কন্ট্রোল প্যানেল এবং প্রিসেট প্রোগ্রাম থাকে যা ব্যবহারকারীকে বিভিন্ন ধরনের খাবার সহজে রান্না করতে সাহায্য করে।
- ধারণক্ষমতা: রাইস কুকারের ধারণক্ষমতা নির্বাচন করাও গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি একটি বড় পরিবারের জন্য রান্না করেন, তবে আপনার একটি বড় ধারণক্ষমতার রাইস কুকার প্রয়োজন হবে। অন্যদিকে, একা বা দুজনের জন্য একটি ছোট মডেল যথেষ্ট হতে পারে।
- উন্নত বৈশিষ্ট্য: কিছু উচ্চ-মানের রাইস কুকারে উন্নত বৈশিষ্ট্য যেমন বাষ্প রান্নার ক্ষমতা, ধীর রান্নার বিকল্প, এবং তাপ সংরক্ষণের মোড থাকে। এগুলি আপনার রান্নার অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত ও বৈচিত্র্যময় করতে পারে।
- পরিষ্কার করা: রাইস কুকার পরিষ্কার করা সহজ হওয়া উচিত। অনেক মডেলে খোলা যায় এমন পাত্র এবং অন্যান্য অংশ থাকে, যা ডিশওয়াশারে পরিষ্কার করা যায়।
রাইস কুকার ব্যবহারের সতর্কতা
- রাইস কুকার ব্যবহারের পূর্বে ম্যানুয়ালটি পড়ুন।
- রাইস কুকারের সঠিক পরিমাণে পানি এবং চাল ব্যবহার করুন।
- রাইস কুকারের ঢাকনা সঠিকভাবে বন্ধ করে দিন।
- রাইস কুকার চালু অবস্থায় কখনোই ছেড়ে দেবেন না।
- রাইস কুকার পরিষ্কার করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন।
কোথায় রাইস কুকার কিনবেন
- ইলেকট্রনিকসের দোকান: রাইস কুকার কেনার জন্য ইলেকট্রনিকসের দোকান একটি ভালো জায়গা।
- অনলাইন শপ: আপনি বিভিন্ন অনলাইন শপ থেকে রাইস কুকার অর্ডার করতে পারেন।
- সুপারমার্কেট: কিছু সুপারমার্কেটও রাইস কুকার বিক্রি করে।
শেষ কথা
রাইস কুকার একটি দরকারী রান্নার সরঞ্জাম যা আপনার রান্নার সময় কমাতে এবং ভাত রান্নাকে সহজ করতে পারে। বাজারে বিভিন্ন বিকল্প পাওয়া যায়, তাই আপনার প্রয়োজন এবং বাজেট অনুযায়ী সঠিক রাইস কুকার নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক রাইস কুকার নির্বাচন করে আপনি না কেবল সুস্বাদু এবং নিখুঁত ভাত রান্না করতে পারবেন, বরং আপনার রান্নার সময় ও প্রচেষ্টাও সাশ্রয় হবে। বাজারে বিভিন্ন মডেল ও বৈশিষ্ট্যের মধ্য থেকে আপনার প্রয়োজন ও বাজেট অনুযায়ী সেরা রাইস কুকার নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ।