সেনজেন ভিসা পাওয়া বর্তমান সময়ে অনেকের জন্য আকাঙ্ক্ষিত। ইউরোপের সেনজেন অঞ্চলের দেশগুলোতে সহজে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য এই ভিসা বহুল প্রচলিত। তবে, এর জন্য কী পরিমাণ খরচ হয়, তা নিয়ে প্রায়ই বিভ্রান্তি দেখা দেয়। ভিসার খরচ নির্ভর করে বেশ কিছু বিষয়ের উপর, যেমন আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য, ভিসার ধরণ, এবং কোন দেশ থেকে আপনি আবেদন করছেন। এছাড়া, সেনজেন ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় নথি এবং ফি সম্পর্কেও অনেকেই নিশ্চিত নন। এই নিবন্ধে আমরা সেনজেন ভিসার খরচ, আবেদন প্রক্রিয়া, এবং সেনজেনভুক্ত দেশগুলোর সুবিধাসমূহ বিশদভাবে আলোচনা করব।
সেনজেন ভিসার খরচ
সেনজেন ভিসার খরচ নির্দিষ্ট কোনো পরিমাণে সীমাবদ্ধ নয়। এটি ভিসার ধরন, ভ্রমণের উদ্দেশ্য, এবং আবেদনকারীর বয়সের মতো বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। সাধারণত, ভিসার আবেদন ফি, মেডিকেল পরীক্ষা, এবং অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত ফি মিলে এই খরচ গঠিত হয়।
আরও পড়ুনঃ ইউরোপের সেনজেন ভুক্ত ও নন সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকা
ভিসার ধরন অনুযায়ী খরচ
সেনজেন ভিসার বিভিন্ন ধরন রয়েছে। আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য অনুসারে আপনি সিঙ্গেল এন্ট্রি বা মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসায় আপনি শুধুমাত্র একবার প্রবেশ করতে পারবেন, যেখানে মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসায় আপনি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একাধিকবার প্রবেশ করতে পারবেন।
সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা
- খরচ: সাধারণত সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসার জন্য ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। তবে, এটি আবেদনকারীর দেশের দূতাবাসের উপর নির্ভরশীল এবং কিছু ক্ষেত্রে এটি কম বা বেশি হতে পারে।
মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা
- খরচ: মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসার ক্ষেত্রে খরচ কিছুটা বেশি হয়। এখানে ভিসার জন্য খরচ হতে পারে ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত। মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী ভ্রমণের জন্য ব্যবহার হয়।
আবেদনকারীর বয়স অনুযায়ী খরচ
বয়সভিত্তিক সেনজেন ভিসার ফি বিভিন্ন হয়।
- প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য (১৮ বছরের উপরে): সেনজেন ভিসার ফি প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ইউরো নির্ধারিত হয়।
- শিশুদের জন্য (৬ থেকে ১২ বছর): শিশুদের ক্ষেত্রে ভিসার খরচ ৪০ থেকে ৪৫ ইউরো হতে পারে।
- ছয় বছরের নিচে: এই বয়সের শিশুদের জন্য ভিসার ফি প্রযোজ্য হয় না, অর্থাৎ তারা বিনামূল্যে ভিসা পেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ ইউরোপ মহাদেশের দেশগুলোর নাম
সেনজেন ভিসা পাওয়ার উপায়
সেনজেন ভিসা পেতে হলে প্রথমেই সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। সেনজেন ভিসা পাওয়ার জন্য দুটি প্রধান উপায় রয়েছে: সরকারিভাবে বা দূতাবাসের মাধ্যমে সরাসরি আবেদন করা এবং বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। তবে, সঠিক প্রক্রিয়া এবং যথাযথ নথি ছাড়া সেনজেন ভিসা পাওয়া কঠিন হতে পারে। নিচে ধাপে ধাপে আলোচনা করা হলো কিভাবে সেনজেন ভিসা পেতে হয়।
১. সরকারিভাবে বা দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন
সরকারিভাবে ভিসার জন্য আবেদন করতে চাইলে, প্রথমে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে।
- আবেদন ফরম পূরণ করা: প্রথম ধাপেই অনলাইন থেকে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। এই ফরম পূরণের সময় ব্যক্তিগত তথ্য, পাসপোর্টের তথ্য, এবং ভ্রমণের বিস্তারিত বিবরণ দিতে হবে।
- প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দেওয়া: ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র যেমন পাসপোর্ট, ফটো, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ইনস্যুরেন্স, এবং অন্যান্য সহায়ক কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
- দূতাবাসে সাক্ষাৎকার: আবেদন জমা দেওয়ার পরে দূতাবাসে সাক্ষাৎকারের জন্য নির্দিষ্ট তারিখে উপস্থিত হতে হবে। সাক্ষাৎকারের সময় আবেদনকারীর ভ্রমণের উদ্দেশ্য এবং অন্যান্য তথ্য যাচাই করা হয়।
২. বেসরকারি বা এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন
অনেকে ভিসা প্রক্রিয়ার ঝামেলা এড়াতে বেসরকারি এজেন্সি বা দালালের সহায়তা নেন। তবে, এই পদ্ধতিতে অতিরিক্ত খরচ হয়। এর পাশাপাশি, অনেকে প্রতারিত হন কারণ সব এজেন্সি সঠিকভাবে কাজ করে না। সেজন্য, নিজে নিজে আবেদন করাই সর্বোত্তম উপায়।
সেনজেন ভিসার আপডেট ফি এবং খরচ
বর্তমানে সেনজেন ভিসার আবেদন ফি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের তুলনায় ফি বৃদ্ধি পেলেও এটি এখনও বেশিরভাগ ভ্রমণকারীর জন্য সহজলভ্য।
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ফি
- প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সেনজেন ভিসা ফি এখন ৮০ থেকে ৯০ ইউরো নির্ধারিত হয়েছে।
শিশুদের জন্য ফি
- ৬ থেকে ১২ বছরের শিশুদের জন্য ভিসা ফি ৪০ থেকে ৪৫ ইউরো। তবে, ৬ বছরের নিচের শিশুদের ভিসা ফি মওকুফ করা হয়েছে।
সেনজেন ভিসার মেয়াদ এবং সুবিধা
সেনজেন ভিসা সাধারণত ৯০ দিনের জন্য প্রদান করা হয়। তবে, এই সময়সীমার মধ্যে আপনি ইউরোপের সেনজেনভুক্ত ২৭টি দেশে অবাধে ভ্রমণ করতে পারবেন। এটি সেনজেন ভিসার অন্যতম প্রধান সুবিধা।
- এক ভিসা, অনেক দেশঃ সেনজেন ভিসার মাধ্যমে ইউরোপের যে কোন সেনজেনভুক্ত দেশে প্রবেশ করা যায়। একবার সেনজেন ভিসা পেলে আপনি সেই অঞ্চলের যেকোনো দেশে বিনা বাধায় যেতে পারবেন।
- যাতায়াত সুবিধাঃ সেনজেনভুক্ত দেশগুলোতে ভিসাধারীরা সহজে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াত করতে পারেন। ট্রেন, বাস, এবং বিমানযোগে সহজেই দেশান্তরে যাত্রা করা যায়।
- শিক্ষা ও চিকিৎসার সুবিধাঃ সেনজেন দেশগুলো উন্নতমানের শিক্ষা এবং চিকিৎসা সুবিধার জন্য বিখ্যাত। যারা সেনজেন ভিসা নিয়ে শিক্ষার জন্য ভ্রমণ করতে চান, তাদের জন্য সেনজেন দেশগুলো একটি আদর্শ গন্তব্য। এছাড়াও, উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা গ্রহণের জন্য সেনজেন দেশগুলোতে অনেকেই ভ্রমণ করেন।
- পর্যটন সুবিধাঃ সেনজেন দেশগুলো তাদের অনন্য সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। সেনজেন ভিসার মাধ্যমে ইউরোপের সুন্দর দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শন করা সম্ভব। পর্যটকদের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত হোটেল, রেস্টুরেন্ট, এবং অন্যান্য সুবিধা।
বাংলাদেশ থেকে সেনজেন ভিসা পেতে কত খরচ হতে পারে?
বাংলাদেশ থেকে সেনজেন ভিসা পাওয়ার জন্য সর্বমোট খরচ ৮ লক্ষ থেকে ১৫ লক্ষ টাকার মধ্যে হতে পারে। এই খরচে ভিসার আবেদন ফি, ফ্লাইট খরচ, হোটেল বুকিং, এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে। তবে, খরচ কিছুটা কমানোর জন্য অনেকেই অনলাইনে নিজে নিজে আবেদন করে থাকেন। এভাবে আবেদন করলে দালালদের মাধ্যমে অতিরিক্ত খরচের সম্ভাবনা কমে যায়।
সেনজেন ভিসার আবেদন প্রক্রিয়ার সুবিধা এবং সতর্কতা
সেনজেন ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল হলেও সতর্কতা অবলম্বন করলে এটি সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব। নিজে নিজে আবেদন করলে খরচ কমে, তবে সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য এবং নথিপত্র ঠিকভাবে জমা দিতে হবে।
সতর্কতা
- দালাল বা এজেন্সির মাধ্যমে অতিরিক্ত খরচ করা থেকে বিরত থাকুন।
- ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় সকল নথিপত্র ঠিকঠাক প্রস্তুত রাখুন।
- ভ্রমণের তারিখ নির্ধারণ করার আগে ভিসা পাওয়ার নিশ্চয়তা পান।
শেষ কথা
সেনজেন ভিসা পেতে খরচ কিছুটা বেশি হলেও এটি ইউরোপে ভ্রমণের জন্য অত্যন্ত কার্যকর এবং বহুল ব্যবহৃত একটি উপায়। সঠিকভাবে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলে সেনজেন ভিসা পাওয়া সম্ভব। অনলাইনে নিজে নিজে আবেদন করার মাধ্যমে খরচ কমিয়ে ফেলা সম্ভব। তাই ভিসার খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে এবং সতর্ক থেকে ভিসার জন্য আবেদন করুন।