ইন্টারনেট যুগে, একটি নির্ভরযোগ্য রাউটার ছাড়া আধুনিক জীবনের কল্পনা করা কঠিন। টিপি-লিংক (TP-Link) হলো এমন এক প্রতিষ্ঠান যা দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বব্যাপী প্রভাবশালী রাউটার উৎপাদক হিসেবে পরিচিত। বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর যুগে ব্রডব্র্যান্ড সংযোগ ছাড়া কার্যকরভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করা কল্পনা করা কঠিন। অফিসের কাজ, অনলাইন শিক্ষা, বিনোদন কিংবা সামাজিক যোগাযোগের জন্য নির্ভরযোগ্য ব্রডব্র্যান্ড সংযোগ অত্যাবশ্যক। তবে এই সংযোগ পূর্ণভাবে উপভোগ করতে হলে রাউটার ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ। রাউটারের মাধ্যমে একাধিক ডিভাইস একসাথে সংযুক্ত হয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে, যা কেবল ব্রডব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে সম্ভব।
টিপি লিংক রাউটার দাম
রাউটার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় বাংলাদেশের বাজারে টিপি-লিংক রাউটার একটি অন্যতম সেরা পছন্দ। টিপি-লিংক রাউটারগুলো উচ্চমানের এবং এক বছরের ওয়ারেন্টি সহ পাওয়া যায়। ইলেকট্রনিক্স পণ্যের দাম বাড়লেও টিপি-লিংক রাউটার এখনো বেশ জনপ্রিয়। এই লেখার মাধ্যমে টিপি-লিংক রাউটার কেনার সবদিক এবং দাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। ২০২৪ সালে টিপি-লিংক রাউটারের বাজার কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে। টিপি-লিংক বিভিন্ন ধরনের রাউটার সরবরাহ করে, যেগুলি বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা এবং বাজেটের সঙ্গে মানানসই। এই পরিবর্তনের সাথে সাথে, টিপি-লিংক তাদের পণ্যসমূহের মূল্য স্থির করেছে যাতে ব্যবহারকারীরা সাশ্রয়ী মূল্যে উচ্চ মানের রাউটার ক্রয় করতে পারেন। কিছু সময়ে বিশেষ অফারের মাধ্যমে ৫০০ টাকার রাউটার পাওয়া যায়। তবে এই কম দামি রাউটারগুলো সাধারণত কম মানের হয়ে থাকে এবং সীমিত এলাকা কভার করে। নিম্নমানের রাউটারগুলোর মধ্যে ১০০০ টাকার রাউটার পাওয়া যায়। তবে এই রাউটারগুলোতে উচ্চমানের সার্ভিস পাওয়া যায় না এবং অনেক দূর পর্যন্ত এলাকা কভার করতে সক্ষম নয়। ১০০০ থেকে ৪০০০ টাকার মধ্যে ভালো মানের টিপি-লিংক রাউটার পাওয়া যায়। এই রাউটারগুলো সাধারণত মিডিয়াম কোয়ালিটির হয় এবং ভালো সার্ভিস প্রদান করে। ৪০০০ থেকে ২০,০০০০ টাকার মধ্যে টিপি-লিংক রাউটারগুলো উচ্চমানের এবং বড় এলাকা কভার করতে সক্ষম। এই রাউটারগুলো গেমিং, ফ্রিল্যান্সিং এবং ভারি কাজের জন্য আদর্শ।
টিপি-লিংক রাউটারের মডেল অনুযায়ী দাম
টিপি-লিংক রাউটারের দাম মডেল অনুযায়ী ভিন্ন হয়। এখানে কয়েকটি জনপ্রিয় মডেল এবং তাদের দাম উল্লেখ করা হলো:
টিপি-লিংক রাউটারের নাম | দাম (টাকা) |
---|---|
TP-Link TL-WR840N 300Mbps Firewall Wi-Fi Router | ১,৩৫০ টাকা |
TP-Link TL-WR841N 300Mbps Wi-Fi N Brand Width Control Router | ১,৫০০ টাকা |
TP-Link TL-WR940N 450Mbps Wireless N Router | ১,৭৫০ টাকা |
TP-Link Archer C24 AC750 Dual Band WIFI Router | ২,১০০ টাকা |
TP-Link Archer C54 AC1200 Beamforming Wi-Fi Router | ২,২৯০ টাকা |
TP-Link Archer C60 AC1350 Wireless Dual Band Router | ৩,১০০ টাকা |
TP-Link Archer C6 V4.0 Gigabit Mesh Wi-Fi Router | ৩,৪৫০ টাকা |
TP-Link TL-MR6400 300 Mbps 3G/4G & Ethernet Single-Band Wi-Fi Router | ৬,৬৫০ টাকা |
TP-Link Deco M4 (3 Pack) Whole Home Mesh Wi-Fi System AC1200 Dual-band Router | ১৪,১২৯ টাকা |
বিভিন্ন অ্যান্টেনার টিপি-লিংক রাউটারের দাম
উন্নত প্রযুক্তির সাথে, টিপি-লিংক রাউটারগুলোতে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগের সুবিধা রয়েছে। বিশেষ করে, Wi-Fi 6 প্রযুক্তি সমৃদ্ধ মডেলগুলো ইন্টারনেট ব্যবহারে অভাবনীয় সুবিধা নিয়ে এসেছে। এই রাউটারগুলোর দাম কিছুটা বেশি হলেও, সেগুলোর কর্মক্ষমতা এবং দীর্ঘস্থায়ী সেবার কথা বিবেচনা করলে তা যুক্তিযুক্ত মনে হয়।
- ২ অ্যান্টেনা রাউটারঃ ২ অ্যান্টেনা রাউটার সাধারণত ১,০২০ থেকে ১,২০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। এই রাউটারগুলোতে ৩০০ এমবিপিএস পর্যন্ত স্পিড পাওয়া যায় এবং ৪ থেকে ৫টি মোবাইল ডিভাইস সংযুক্ত করা যায়।
- ৩ অ্যান্টেনা রাউটারঃ ৩ অ্যান্টেনা রাউটার ১,৪০০ থেকে ১,৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। এই রাউটারগুলো বেশ কয়েকটি ডিভাইস সংযোগ করতে পারে এবং ভালো স্পিড প্রদান করে।
- ৪ অ্যান্টেনা রাউটারঃ ৪ অ্যান্টেনা রাউটার ২,৫০০ থেকে ৩,০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। এই রাউটারগুলো ফ্রিল্যান্সিং, ভারি কাজ, গেমিং, লাইভ স্ট্রিমিং ইত্যাদি কাজের জন্য আদর্শ। এর রেন্জ ২,০০০ বর্গফুট পর্যন্ত এবং সিঙ্গেল কোর প্রসেসর ৮৬৭ এমবিপিএস পর্যন্ত গতি প্রদান করে।
- মেশ রাউটারঃ মেশ রাউটারগুলো বড় ফ্যাক্টরি বা কোম্পানির জন্য আদর্শ। এই রাউটারগুলো ৫০০ মিটার রেন্জ পর্যন্ত কভার করতে সক্ষম এবং ডেকো সিরিজের রাউটারগুলো এই কাজে অত্যন্ত উপযোগী।
টিপি-লিংক রাউটারের সুবিধা ও বৈশিষ্ট্য
টিপি-লিংক রাউটার ব্যবহারে অনেক সুবিধা রয়েছে। রাউটারগুলো উচ্চমানের সিকিউরিটি সুবিধা দেয় এবং ল্যানপোর্ট সুবিধাও রয়েছে। এর রিপিটার সুবিধা ও গেমিং এর জন্য কম ল্যাটেন্সি ফিচার রাউটারগুলোকে আরো জনপ্রিয় করেছে। টিপি-লিংক রাউটার খুব সহজে সেটআপ করা যায়। ব্যবহারকারীর গাইডলাইন অনুসরণ করে সহজেই রাউটারটি ইনস্টল করতে পারেন। প্রয়োজন হলে টিপি-লিংক কাস্টমার কেয়ারের সহায়তাও নিতে পারেন।
- গেমিং এর জন্য আদর্শঃ টিপি-লিংক রাউটার বিশেষভাবে গেমিং এর জন্য উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। এর কম ল্যাটেন্সি ফিচার গেমারদের দ্রুত এবং নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে।
- রিপিটার সুবিধাঃ রিপিটার সুবিধা থাকায় টিপি-লিংক রাউটার দিয়ে আরো বড় এলাকা কভার করা সম্ভব হয়। এটা এমন এক ফিচার যা অন্য অনেক রাউটারগুলোতে দেখা যায় না।
- সিকিউরিটিঃ টিপি-লিংক রাউটার উচ্চমানের সিকিউরিটি সুবিধা প্রদান করে, যা আপনার ডেটা এবং সংযোগকে সুরক্ষিত রাখে।
- ল্যানপোর্ট সুবিধাঃ টিপি-লিংক রাউটারের ল্যানপোর্ট সুবিধা থাকায় ইথারনেট কেবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ সম্ভব হয়, যা আরো দ্রুত ও স্থিতিশীল ইন্টারনেট প্রদান করে।
টিপি-লিংক রাউটারের আপডেট এবং নতুন প্রযুক্তি
- Wi-Fi 7 এবং ভবিষ্যতের রাউটারঃ ২০২৪ সালে, টিপি-লিংক Wi-Fi 7 প্রযুক্তি সমৃদ্ধ রাউটার বাজারে আনতে পারে। এটি ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রে আরও গতি এবং স্থায়িত্ব প্রদান করবে। ভবিষ্যতের রাউটারগুলি আরও উন্নত এবং সাশ্রয়ী হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
- নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তাঃ টিপি-লিংক তাদের রাউটারগুলোর নিরাপত্তার দিকে বিশেষ নজর দেয়। সর্বশেষ আপডেট এবং নিরাপত্তা প্যাচগুলো ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা রক্ষা করে। এটি নিশ্চিত করে যে আপনার ডেটা সব সময় সুরক্ষিত থাকে।
শেষ কথা
টিপি-লিংক রাউটার খুব সহজে সেটআপ করা যায়। রাউটারের সাথে দেয়া ম্যানুয়াল অনুসরণ করলেই সহজেই সেটআপ করা সম্ভব। এছাড়াও, টিপি-লিংক এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকেও বিস্তারিত গাইডলাইন পাওয়া যায়। আশা করি, এই লেখার মাধ্যমে টিপি-লিংক রাউটারের বিভিন্ন মডেল, দাম এবং সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আপনার রাউটার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে এই তথ্যগুলো আপনাকে সহায়ক হবে। যদি লেখাটি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং তাদেরও এই তথ্য জানতে সাহায্য করুন। ধন্যবাদ।