বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (বিইসি) সম্প্রতি ভোটারদের সুবিধার্থে অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোডের সুযোগ চালু করেছে। এই সেবার মাধ্যমে একজন ভোটার ঘরে বসেই অল্প কিছু ধাপ অনুসরণ করে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের (NID) ডিজিটাল কপি ডাউনলোড করতে পারেন। আজকের এই নিবন্ধে, ভোটার আইডি কার্ড অনলাইনে ডাউনলোড করার সমস্ত পদ্ধতি ও প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা তুলে ধরা হলো।
ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড
অনেক পরিস্থিতিতে আমাদের ভোটার আইডি কার্ডের ডিজিটাল কপি দ্রুত প্রয়োজন হতে পারে। নিচে কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো যখন অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করা জরুরি হয়ে উঠতে পারে:
- হারিয়ে গেলে: যদি আপনার ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে যায় বা কোনোভাবে নষ্ট হয়ে যায়।
- তথ্য ভুল থাকলে: আইডি কার্ডে যদি কোনো ভুল তথ্য থেকে থাকে, তবে তা যাচাই বা সংশোধনের জন্য প্রয়োজন।
- অস্পষ্ট ছবি: অনেক ক্ষেত্রে আইডি কার্ডের ছবিটি পরিষ্কার না থাকলে ডিজিটাল কপি সংগ্রহ করা সুবিধাজনক।
- নতুন ভোটারদের জন্য: যারা নতুন ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করেছেন, কিন্তু এখনো আইডি কার্ড পাননি, তাদের জন্য এটি বিশেষ উপকারী।
ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোডের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র
ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোডের জন্য আপনার কিছু প্রাথমিক তথ্য ও সরঞ্জাম প্রয়োজন হবে। সেগুলো হলো:
- স্মার্টফোন বা কম্পিউটার
- ইন্টারনেট সংযোগ
- এনআইডি নম্বর (পুরাতন ভোটারদের জন্য)
- ভোটার রেজিস্ট্রেশন স্লিপ নম্বর (নতুন ভোটারদের জন্য)
- জন্ম তারিখ
- একটি সচল মোবাইল নাম্বার
অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করার ধাপসমূহ
বর্তমানে, ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোডের পদ্ধতি সহজ করা হয়েছে। আপনাকে শুধু নির্দিষ্ট কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে, যা নিচে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো।
ধাপ ১: NID Wallet অ্যাপ ইনস্টল করুন
প্রথমে Google Play Store থেকে NID Wallet অ্যাপটি ডাউনলোড এবং ইনস্টল করুন। এই অ্যাপটি আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র ডাউনলোড এবং ফেস ভেরিফিকেশনের জন্য প্রয়োজন।
ধাপ ২: একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন
২.১. ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন
ব্রাউজারে গিয়ে services.nidw.gov.bd/nid-pub/claim-account লিংকে প্রবেশ করুন। এখানে আপনি আপনার অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে পারবেন।
২.২. প্রয়োজনীয় তথ্য দিন
এখানে আপনার NID নম্বর বা ভোটার রেজিস্ট্রেশন স্লিপ নম্বর (নতুন ভোটারদের জন্য) প্রদান করতে হবে। যদি আপনি নতুন ভোটার হন তবে স্লিপ নম্বরের আগে NIDFN লিখতে হবে, যেমন: (NIDFN476398632)। এরপর আপনার জন্ম তারিখ দিন এবং ক্যাপচা পূরণ করে সাবমিট করুন।
২.৩. ঠিকানা নির্বাচন
এই ধাপে আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা নির্বাচন করতে হবে। এখানে বিভাগ, জেলা, এবং উপজেলা নির্বাচন করুন।
২.৪. মোবাইল নম্বর যাচাই
আপনার সচল মোবাইল নম্বর দিন এবং “বার্তা পাঠান” বাটনে ক্লিক করুন। মোবাইলে একটি OTP কোড আসবে, যা দিয়ে মোবাইল নম্বর যাচাই সম্পন্ন করতে হবে।
ধাপ ৩: ফেস ভেরিফিকেশন
৩.১. QR কোড স্ক্যান করুন
ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত QR কোডটি NID Wallet অ্যাপের মাধ্যমে স্ক্যান করুন।
৩.২. ফেস ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন
ফেস ভেরিফিকেশনের জন্য অ্যাপের নির্দেশনা অনুসরণ করে মুখের ছবি তুলুন এবং মাথা ডানে ও বামে ঘুরান। সফলভাবে ভেরিফিকেশন হলে “OK” মেসেজ দেখাবে।
ধাপ ৪: পাসওয়ার্ড সেট করুন
এই ধাপে আপনাকে একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে। ভবিষ্যতে সহজে লগইন করার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ধাপ ৫: আইডি কার্ড ডাউনলোড
সবশেষে, লগইন করে ড্যাশবোর্ডে গিয়ে ডাউনলোড অপশনে ক্লিক করে আপনার NID কার্ডের ডিজিটাল কপি ডাউনলোড করুন।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও নির্দেশনা
ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করার সময় কয়েকটি বিষয় মনে রাখা জরুরি:
- রঙিন প্রিন্ট: ডাউনলোড করা আইডি কার্ডটি অবশ্যই রঙিন প্রিন্ট করুন, যাতে এটি আরও পরিচ্ছন্ন ও সহজে ব্যবহারযোগ্য হয়।
- সংরক্ষণ: ভবিষ্যতে প্রয়োজনের জন্য কার্ডটির একটি কপি নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করুন।
- সঠিক তথ্য দিন: অনলাইনে আবেদন করার সময় সঠিক তথ্য প্রদান করুন, যাতে পরবর্তীতে কোনো জটিলতা না হয়।
- সহায়তা প্রয়োজন হলে: কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে নির্বাচন কমিশনের হেল্পলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।
- মূল কার্ডের সমতুল্য নয়: ডাউনলোড করা আইডি কার্ডটি আসল ভোটার আইডি কার্ডের সমতুল্য নয়। এটি শুধুমাত্র একটি ডিজিটাল কপি। ভোট প্রদান বা অন্যান্য আইনি কাজে আসল ভোটার আইডি কার্ড ব্যবহার করতে হবে।
- তথ্য সংশোধন: যদি আপনার আইডি কার্ডের তথ্যে ভুল থাকে, তাহলে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে গিয়ে সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে।
- নতুন ভোটারদের জন্য নির্দেশনা: নতুন ভোটারদের জন্য ভোটার তালিকায় নাম নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে যাচাই করে নিতে হবে।
অতিরিক্ত তথ্য ও সহায়ক লিংক
ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড ও অন্যান্য পরিষেবা সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট: https://ecs.gov.bd/
শেষ কথা
অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোডের এই পদ্ধতিটি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জনগণের সুবিধার্থে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এর মাধ্যমে সহজেই ঘরে বসে ভোটার আইডি কার্ডের ডিজিটাল কপি সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে। আশা করা যায়, এই নির্দেশিকাটি আপনাকে ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোডের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। যদি এরপরেও কোনো অসুবিধা হয়, তাহলে নির্বাচন কমিশনের সহায়তা কেন্দ্রে যোগাযোগ করে আপনার সমস্যার সমাধান করতে পারেন।