হুইল চেয়ারের দাম কত ২০২৪

হুইল চেয়ারের দাম কত

হুইল চেয়ার হলো এমন একটি অতি প্রয়োজনীয় যন্ত্র যা চলাচলে অক্ষম ব্যক্তি বা যারা স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে সক্ষম নন, তাদের প্রতিদিনের জীবনকে সহজতর করে তোলে। এটি শুধুমাত্র চলাচলের সুবিধা দেয় না, বরং ব্যবহারকারীর মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার ওপরও ব্যাপক প্রভাব ফেলে। সঠিক হুইল চেয়ার বেছে নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এবং এর দাম অনেকাংশেই নির্ভর করে আপনার প্রয়োজন ও রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর। এই লেখায়, আমরা হুইল চেয়ারের বিভিন্ন ধরন, তাদের দাম, এবং বাংলাদেশের বাজারে প্রাপ্ত কিছু বিশেষ মডেলের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আমাদের লক্ষ্য হলো আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করা যাতে আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সেরা মানের হুইল চেয়ারটি পেতে পারেন।

হুইল চেয়ারের দাম কত

হুইল চেয়ার শুধুমাত্র চলাচলের একটি মাধ্যম নয়, এটি একটি জীবনযাত্রার অপরিহার্য অংশ। একজন মানুষের শারীরিক স্বাধীনতা রক্ষায় এটি সহায়ক হতে পারে এবং মানসিক অবস্থাও উন্নত করতে পারে। এটি স্বাবলম্বী হওয়ার অনুভূতি দেয় এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। হুইল চেয়ারের বাজারে বিভিন্ন ধরণের চেয়ার পাওয়া যায়, প্রতিটির দাম, বৈশিষ্ট্য, এবং মানে ভিন্নতা থাকে। নিচে কিছু জনপ্রিয় ধরণের হুইল চেয়ারের দাম এবং বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো।

১. নরমাল হুইল চেয়ারের দাম

নরমাল হুইল চেয়ার হলো সেই ধরনের হুইল চেয়ার যা সাধারণত অল্প সময়ের ব্যবহারের জন্য ক্রয় করা হয়। এটি খুব বেশি বৈশিষ্ট্য বা সুবিধা প্রদান করে না, তবে দৈনন্দিন চলাচলের জন্য যথেষ্ট।

মূল্য তালিকা:

  • Kaiyang KY809-46 High Strength Aging Resistant: ৭,০০০ টাকা
  • Standard Manual Folding Wheelchair KY-809: ৭,০০০ টাকা
  • Kaiyang KY696 Chromed Steel Commode Wheelchair: ৬,০০০ টাকা

২. ম্যানুয়াল হুইল চেয়ারের দাম

ম্যানুয়াল হুইল চেয়ার হচ্ছে সেই ধরনের চেয়ার যা রোগী নিজে বা অন্যের সহায়তায় চালাতে পারেন। এটি সাধারণত হালকা ওজনের হয় এবং ভাঁজ করে সংরক্ষণ করা যায়, যা পরিবহণের জন্য উপযুক্ত। বাংলাদেশে এই ধরনের চেয়ারগুলোর দাম প্রায় ৫,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকার মধ্যে।

মূল্য তালিকা:

  • Standard Manual Wheelchair: ৫,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা
  • High-End Manual Wheelchair: ২০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত।

৩. ব্যাটারি চালিত হুইল চেয়ারের দাম

ব্যাটারি চালিত হুইল চেয়ার বিশেষভাবে তৈরি করা হয় তাদের জন্য যারা শারীরিকভাবে দুর্বল এবং নিজেরা হুইল চেয়ার চালাতে সক্ষম নন। এই ধরনের চেয়ারগুলোতে বৈদ্যুতিক মোটর থাকে যা ব্যবহারকারীকে সহজেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার সুযোগ দেয়।

মূল্য তালিকা:

  • Dayang DY01114LA Folding Electric Wheelchair: ৬০,০০০ থেকে ৯৮,০০০ টাকা
  • High-End Electric Wheelchair: ১,০০,০০০ টাকা থেকে শুরু।

৪. কাস্টমাইজড হুইল চেয়ারের দাম

কাস্টমাইজড হুইল চেয়ার হলো সেই ধরনের চেয়ার যা ব্যবহারকারীর বিশেষ প্রয়োজন অনুযায়ী ডিজাইন করা হয়। এটি সাধারণত উচ্চমানের এবং ব্যয়বহুল হয়, কারণ এর প্রতিটি অংশ রোগীর নির্দিষ্ট প্রয়োজনের জন্য তৈরি করা হয়।

মূল্য তালিকা:

  • বেসিক কাস্টমাইজড হুইল চেয়ার: ৩০,০০০ টাকা
  • প্রিমিয়াম কাস্টমাইজড হুইল চেয়ার: ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত

৫. পুরাতন হুইল চেয়ারের দাম

বাজেট স্বল্পতার কারণে অনেকেই পুরাতন হুইল চেয়ার কেনার দিকে ঝোঁকেন। পুরাতন হুইল চেয়ার সাধারণত নতুনের চেয়ে কম দামে পাওয়া যায় এবং যদি ভালোভাবে মেরামত করা হয় তবে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত হতে পারে।

মূল্য তালিকা:

  • নরমাল পুরাতন হুইল চেয়ার: ২,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা
  • ভালো মানের পুরাতন হুইল চেয়ার: ৭,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা

হুইল চেয়ার কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা

হুইল চেয়ার কেনার আগে আপনার জানা উচিত আপনি কী ধরনের চেয়ার কিনতে চান এবং এটি কোন ধরনের রোগীর জন্য ব্যবহার করা হবে। হুইল চেয়ারের ধরন ও বৈশিষ্ট্য নির্বাচন মূলত নির্ভর করে রোগীর শারীরিক অবস্থা, বয়স, ও চলাচলের প্রয়োজনের ওপর।

রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং চাহিদা

  • অস্থায়ী বা স্থায়ী সমস্যাঃ রোগীর শারীরিক সমস্যা যদি অস্থায়ী হয়, তাহলে নরমাল বা সাধারণ হুইল চেয়ারই যথেষ্ট হতে পারে। তবে, যদি এটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হয়, তাহলে উচ্চমানের, কাস্টমাইজড বা ব্যাটারি চালিত হুইল চেয়ার কেনা উচিৎ।
  • শক্তি এবং শারীরিক ক্ষমতাঃ রোগী কি নিজে নিজে চেয়ার চালাতে সক্ষম নাকি তাকে অন্যের সহায়তা নিতে হবে? যদি নিজে চলতে সক্ষম হন তাহলে ম্যানুয়াল হুইল চেয়ার ভালো বিকল্প হতে পারে, আর যদি শারীরিক শক্তির অভাব থাকে তাহলে ব্যাটারি চালিত হুইল চেয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত।
  • হুইল চেয়ার ব্যবহারের সময়কালঃ এই চেয়ারটি অল্প সময়ের জন্য ব্যবহার করা হবে নাকি দীর্ঘমেয়াদী জন্য? অল্প সময়ের ব্যবহারের জন্য সাধারণ মানের হুইল চেয়ার পর্যাপ্ত হতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের জন্য উচ্চমানের এবং আরামদায়ক হুইল চেয়ার বেছে নেওয়া উচিত।
  • বাজেটঃ আপনার বাজেটের ওপর ভিত্তি করেও হুইল চেয়ারের ধরনের নির্বাচন করতে হবে। আপনি কম বাজেটেও ভালো মানের চেয়ার পেতে পারেন, তবে উচ্চমানের জন্য কিছুটা বেশি ব্যয় করতে হতে পারে।

হুইল চেয়ার ব্যবহারের সতর্কতা এবং রক্ষণাবেক্ষণ

হুইল চেয়ার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা এবং রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন যা এর স্থায়িত্ব এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো:

  • ১. নিয়মিত পরিষ্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণঃ হুইল চেয়ার নিয়মিত পরিষ্কার রাখা এবং এর অংশগুলো ঠিকমত রক্ষণাবেক্ষণ করা জরুরি। চাকার স্থায়িত্ব, ব্রেকিং সিস্টেম এবং সিটের আরামদায়কতা নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত। এটি হুইল চেয়ারের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • ২. ব্যাটারি চালিত হুইল চেয়ারের ক্ষেত্রেঃ যদি আপনি ব্যাটারি চালিত হুইল চেয়ার ব্যবহার করেন, তাহলে ব্যাটারির রক্ষণাবেক্ষণ ও চার্জের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। নিয়মিতভাবে ব্যাটারির চার্জ চেক করা এবং চার্জ শেষ হয়ে গেলে তৎক্ষণাৎ চার্জ দেওয়া উচিত। এছাড়াও, ব্যাটারির আয়ুষ্কাল নির্ণয় করে সময়মতো প্রতিস্থাপন করা উচিৎ।
  • ৩. উপযুক্ত ব্যবহারের প্রশিক্ষণঃ হুইল চেয়ার ব্যবহারকারীদের সঠিকভাবে চেয়ার চালানোর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা উচিত। বিশেষ করে ম্যানুয়াল হুইল চেয়ারের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে চাকা ঘোরানো এবং ব্রেক ব্যবহারের পদ্ধতি জানতে হবে। এটি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং চলাচলকে আরও নিরাপদ ও সহজ করে তোলে।
  • ৪. ভাঁজ করার সুবিধা এবং সঠিক সংরক্ষণঃ যদি আপনার হুইল চেয়ার ভাঁজ করা যায়, তাহলে সেটি ভাঁজ করে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা উচিত। এটি পরিবহণের জন্যও সুবিধাজনক। বিশেষত ম্যানুয়াল এবং কিছু ইলেকট্রিক হুইল চেয়ারের ক্ষেত্রে ভাঁজ করার সুবিধা রয়েছে, যা স্থান সাশ্রয় করতে সহায়ক।
  • ৫. প্রতিস্থাপন এবং মেরামতঃ যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ মেরামত করানো উচিত। পুরানো বা নষ্ট হওয়া অংশ প্রতিস্থাপন করা জরুরি। বিশেষত চাকা, ব্রেক, এবং সিটের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত মেরামত করানো উচিত।

হুইল চেয়ার কোথায় পাওয়া যায়?

বাংলাদেশে হুইল চেয়ার কেনার জন্য বিভিন্ন স্থান এবং মাধ্যম রয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন মেডিকেল সরঞ্জাম বিক্রেতা দোকানে আপনি সঠিক মানের হুইল চেয়ার পেতে পারেন। এছাড়াও, অনলাইন শপিং প্লাটফর্ম যেমন দারাজ, বা বিভিন্ন ফেসবুক পেজ থেকে হুইল চেয়ার কেনা সম্ভব।

বিশ্বস্ত দোকান এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম:

  • দারাজ: দারাজ থেকে সহজেই বাড়িতে বসে হুইল চেয়ার ক্রয় করা যায়। দারাজের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি বিশ্বস্ত এবং সহজ রিটার্ন পলিসি রয়েছে।
  • মেডিকেল সরঞ্জাম সরবরাহকারী শপ: ঢাকার বিভিন্ন মেডিকেল সরঞ্জাম সরবরাহকারী দোকানে হুইল চেয়ার পাওয়া যায়, যেগুলো আপনি সরাসরি ক্রয় করতে পারেন।

শেষ কথা

হুইল চেয়ার শুধু অস্থায়ী ব্যবহারের জন্য নয়, এটি একজন ব্যবহারকারীর জীবনের স্থায়ী অংশও হতে পারে। চলাচলের অসুবিধা থাকা ব্যক্তিরা দীর্ঘ সময় ধরে হুইল চেয়ার ব্যবহার করে স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন করতে সক্ষম হন। এটি শুধুমাত্র ফিজিক্যালি চলাচলের ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করে না, বরং এটি মানসিক স্বাস্থ্যকেও ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। এই লেখায় হুইল চেয়ারের বিভিন্ন ধরণ এবং তাদের দাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি, এই তথ্যগুলো আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে। আপনার প্রয়োজন, রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং বাজেট অনুযায়ী সঠিক হুইল চেয়ার বেছে নিতে পারেন। যদি এই লেখাটি আপনার জন্য উপকারী হয়, তাহলে আপনার আশেপাশের লোকদেরকেও হুইল চেয়ারের দাম সম্পর্কে জানাতে সাহায্য করুন। ধন্যবাদ!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top