আউন্সের ধারণা প্রাচীন রোমানদের আমল থেকে উদ্ভূত। তবে বর্তমান সময়ে এটি খুব কম দেখা যায়। প্রাচীন রোমানদের পরিমাপ পদ্ধতিতে আউন্স ব্যবহৃত হত বিভিন্ন দ্রব্যের ওজন মাপার জন্য। সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন দেশে এই পরিমাপ পদ্ধতি কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু আউন্সের ব্যবহার আজও বিভিন্ন ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়। রান্নাঘরের ক্ষেত্রে পরিমাপের জন্য বিভিন্ন একক ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে কাপ এবং আউন্স অন্যতম। আউন্স একটি ইংরেজি পরিমাপের একক যা ভর এবং আয়তন উভয়ই নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। সহজ কথায়, আউন্স হল ওজন ও ভলিউম পরিমাপের একটি একক। অনেকে জানার চেষ্টা করেন যে, এক কাপে কত আউন্স ধরা হয়। এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর পেতে আমাদের কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হবে।
এক কাপে কত আউন্স ধরে
কাপের আকার এবং ধরনের উপর ভিত্তি করে এক কাপে কত আউন্স তা নির্ধারিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, মেটাল কাপ, প্লাস্টিক কাপ, এবং সিরামিক কাপের আকার এবং ভলিউমের মধ্যে পার্থক্য থাকতে পারে। ফলে, এক কাপে কত আউন্স হবে তা কাপের ধরন অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত, ১ কাপে ৮ আউন্স ধরা হয়। তবে দেশ অনুযায়ী এবং কাপের আকার ও ধরন ভেদে এই পরিমাপের কিছু পার্থক্য রয়েছে।
- আমেরিকান কাপঃ আমেরিকায় এক এক কাপে ৮ আউন্স ধরা হয়। আমেরিকান রান্নার রেসিপিতে এই পরিমাপটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় এবং এটি সবচেয়ে সাধারণ মাপের একটি।
- ইউরোপিয়ান কাপঃ ইউরোপিয়ান এক কাপে সাধারণত ৬ আউন্স ধরা হয়। ইউরোপীয় রেসিপিগুলিতে এই মাপটি ব্যবহৃত হয় এবং এটি আমেরিকান কাপের চেয়ে একটু ছোট।
- ব্রিটিশ কাপঃ ব্রিটিশ এক কাপে ৯.৬ আউন্স ধরা হয়। ব্রিটিশ রান্নার রেসিপিগুলিতে এই মাপটি ব্যবহৃত হয় এবং এটি আমেরিকান ও ইউরোপিয়ান কাপের চেয়ে বড়।
- বাংলাদেশের পরিমাপঃ বাংলাদেশে এক কাপে সাধারণত আমেরিকান মাপ অনুসরণ করা হয়, অর্থাৎ এক কাপে ৮ আউন্স ধরা হয়। বাংলাদেশের রান্নার রেসিপিগুলিতে এই মাপটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।
এক কাপে কত তরল আউন্স ধরে
কাপের আকার অনুযায়ী তরল পরিমাপ ভিন্ন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ছোট কাপ সাধারণত ৬ থেকে ৮ আউন্স ধারণ করতে পারে। আবার বড় কাপ ১০ আউন্স তরল ধারণ করতে পারে। এই ভিন্নতাগুলি রান্নার সময় সঠিক মাপ নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।তরল পদার্থ যেমন পানি, দুধ, তেল ইত্যাদি মাপার ক্ষেত্রে কাপের ব্যবহার খুবই সাধারণ। আমেরিকান এবং বাংলাদেশি রান্নার রেসিপিতে একটি কাপে তরল হিসেবে সাধারণত ৮ আউন্স ধরা হয়। এই মাপ রান্নার সময় সঠিক মাপ নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। তরল পরিমাপে ব্যবহৃত কাপ সাধারণত ৮ ইঞ্চি উঁচু এবং ৩ ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট হয়। তবে কাপের আকার এবং ধরন ভিন্ন হলে এর পরিমাপও ভিন্ন হতে পারে।
- ৮ আউন্স কাপ: একটি সাধারণ কাপে ৮ আউন্স তরল ধারণ করতে পারে, যা প্রায় 237 মিলিলিটার।
- ৬ আউন্স কাপ: কিছু কাপের আকার অনুযায়ী এক কাপে ৬ আউন্স তরল ধারণ করতে পারে।
- ১০ আউন্স কাপ: কিছু বিশেষ ধরনের কাপ ১০ আউন্স তরল ধারণ করতে সক্ষম।
এক কাপে কত শুষ্ক আউন্স ধরে
শুষ্ক আউন্সের মাপ নির্ভর করে মূলত শুষ্ক পদার্থের ঘনত্ব ও ওজনের ওপর। কারণ প্রতিটি শুষ্ক পদার্থের ঘনত্ব এক নয়, ফলে একই পরিমাপের ক্ষেত্রে তাদের ওজনেও পার্থক্য হয়। উদাহরণস্বরূপ, চিনি ও লবণের ঘনত্ব কখনোই এক হবে না। চিনির ঘনত্ব যেখানে ০.৮ গ্রাম প্রতি সেন্টিমিটার কিউব (g/cm³), সেখানে লবণের ঘনত্ব ২.১৬ গ্রাম প্রতি সেন্টিমিটার কিউব (g/cm³)। চিন্তা করুন যদি দুটি শুষ্ক পদার্থ, চিনি ও লবণ, ৮ আউন্স করে মাপা হয়, তাহলে তাদের ওজন হবে ভিন্ন। চিনির ৮ আউন্স মানে প্রায় ৬৪০ গ্রাম হবে, আর লবণের ৮ আউন্স হবে প্রায় ১৭২৮ গ্রাম। এই উদাহরণ থেকে বোঝা যায়, কঠিন পদার্থের আউন্স নির্ধারণ করা হয় তাদের ঘনত্বের ভিত্তিতে।
১ আউন্স সমান কত গ্রাম?
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, ১ আউন্স সমান কত গ্রাম? এটি নির্ভর করবে মাপা পদার্থের ধরণের ওপর। উদাহরণস্বরূপ:
- চিনির ক্ষেত্রে: ১ আউন্স = ৮০ গ্রাম (প্রায়)
- লবণের ক্ষেত্রে: ১ আউন্স = ২১৬ গ্রাম (প্রায়)
- ময়দা ক্ষেত্রে: ময়দা প্রায়ই বেকিংয়ে ব্যবহৃত হয় এবং এর ঘনত্ব প্রায় ০.৫৯৫ গ্রাম প্রতি সেন্টিমিটার কিউব। ১ কাপ ময়দা = ৪.২৫ আউন্স = প্রায় ১২০ গ্রাম
- কোকো পাউডার ক্ষেত্রে: কোকো পাউডার ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন মিষ্টি পদার্থ তৈরিতে, এর ঘনত্ব প্রায় ০.৪১৩ গ্রাম প্রতি সেন্টিমিটার কিউব। ১ কাপ কোকো পাউডার = ৩.৫ আউন্স = প্রায় ১০০ গ্রাম
- কর্নস্টার্চ: কর্নস্টার্চ ব্যবহৃত হয় ঘন করার উপাদান হিসেবে, এর ঘনত্ব প্রায় ০.৫৪ গ্রাম প্রতি সেন্টিমিটার কিউব। ১ কাপ কর্নস্টার্চ = ৪.৫ আউন্স = প্রায় ১২৮ গ্রাম
পরিমাপক চামচ ব্যবহার
পরিমাপক চামচ ব্যবহার করে শুষ্ক পদার্থ মাপা সহজ। উদাহরণস্বরূপ:
- ১ টেবিল চামচ ময়দা = ০.৩১ আউন্স = প্রায় ৯ গ্রাম
- ১ চা চামচ লবণ = ০.২১৩ আউন্স = প্রায় ৬ গ্রাম
এক আউন্স সমান কত গ্রাম
অনেকেই আউন্স এবং কাপের হিসাবটি সহজে বুঝতে পারেন না। যদি এক কাপে বা এক আউন্সে কত গ্রাম হয় তা জানা থাকে, তাহলে আউন্সের হিসাব অনেক সহজে বোঝা যায় এবং আউন্স পরিমাপ করতে সুবিধা হয়। সাধারণত ১ আউন্স সমান ২৮.৩৫ গ্রাম। বাংলাদেশে ১ কাপ ধরা হয় ৮ আউন্স সমান, অর্থাৎ ১ কাপ সমান ২২৬.৮ গ্রাম।
সঠিক মাপের উপায়
সঠিক পরিমাপের জন্য কিচেন স্কেল ব্যবহার করা সর্বোত্তম পদ্ধতি। ডিজিটাল স্কেলের সাহায্যে আপনি সহজেই সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারবেন। এছাড়াও পরিমাপক চামচ ও কাপ ব্যবহার করে নির্ভুলভাবে শুষ্ক পদার্থ মাপা যায়।
শেষ কথা
এক কাপে কত আউন্স ধরে সেই তথ্য জানা আমাদের দৈনন্দিন রান্নার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিমাপ জানলে আমরা সহজেই সঠিকভাবে বিভিন্ন রেসিপি অনুসরণ করতে পারি এবং সুস্বাদু খাবার প্রস্তুত করতে পারি। সঠিক পরিমাপের মাধ্যমে আমরা আমাদের খাবারের গুণগত মান উন্নত করতে পারি এবং খাবারের স্বাদ আরও সুস্বাদু করতে পারি।