বাংলাদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করা এখন অনেক সহজ হয়েছে, যা প্রযুক্তির উন্নতির কারণে ঘরে বসেই সম্পন্ন করা যায়। ড্রাইভিং লাইসেন্স যাচাই করার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া সড়কে গাড়ি চালানো আইনত নিষিদ্ধ এবং এটি সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হতে পারে। ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার জন্য অনলাইন এবং অফলাইন উভয় মাধ্যমই বর্তমানে বিদ্যমান। এই নিবন্ধে আমরা বিস্তারিতভাবে অনলাইনে এবং অফলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স যাচাইয়ের বিভিন্ন পদ্ধতি এবং নিয়মাবলি সম্পর্কে আলোচনা করব।
ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়া এবং নিয়মাবলি
বাংলাদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। বিআরটিএ-এর আওতাধীন ৩২টি জেলায় অবস্থিত ৮৩টি প্রশাসনিক সার্কেলের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা হয়। ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে প্রথমে আবেদন করতে হয়, তারপর একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর প্রার্থীকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য লাইসেন্স প্রদান করা হয়।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রক্রিয়া মূলত তিনটি ধাপে বিভক্ত:
- প্রাথমিক আবেদন: আবেদনকারীকে প্রথমে একটি প্রাথমিক ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ সনদ পেতে হবে, যা বিআরটিএ অনুমোদিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে নিতে হয়।
- নিরীক্ষণ ও পরীক্ষা: প্রশিক্ষণ শেষে, আবেদনকারীকে তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা উতরাতে হয়।
- লাইসেন্স প্রদান: সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আবেদনকারীকে একটি পূর্ণাঙ্গ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা হয়।
ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা পাস করা একটি কঠোর প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে বিআরটিএ নিশ্চিত করে যে প্রার্থী সড়কে সঠিকভাবে গাড়ি চালানোর জন্য যোগ্য।
ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক
ড্রাইভিং লাইসেন্স যাচাই করার জন্য বেশ কয়েকটি সহজ মাধ্যম রয়েছে। আপনি চাইলে অনলাইনে ও অফলাইনে উভয়ভাবেই আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সের অবস্থা বা বৈধতা চেক করতে পারেন। এখানে বিভিন্ন পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:
১. রেফারেন্স নাম্বার দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক
রেফারেন্স নাম্বারের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার জন্য বিআরটিএ একটি বিশেষ অ্যাপ তৈরি করেছে। এটি হলো BRTA DL Checker App, যা গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করা যায়। এই অ্যাপ ব্যবহার করে আপনি সহজেই আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। পদ্ধতিটি হলো:
- প্রথমে প্লে স্টোর থেকে BRTA DL Checker অ্যাপ ডাউনলোড করুন।
- এরপর অ্যাপটি চালু করে রেফারেন্স নাম্বার এবং জন্ম তারিখ প্রবেশ করান।
- তারপর “সার্চ” অপশনে ক্লিক করলে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিস্তারিত তথ্য স্ক্রিনে দেখা যাবে।
এই পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ এবং দ্রুত কার্যকর। এছাড়া, রেফারেন্স নাম্বার ভুল প্রবেশ করলে পুনরায় সঠিক তথ্য প্রদান করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
২. brta.gov.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক
অনলাইনে সরকারি ওয়েবসাইট brta.gov.bd এর মাধ্যমে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) এবং আবেদনকৃত মোবাইল নম্বর ব্যবহার করতে হয়। নীচে বিস্তারিত ধাপগুলো দেওয়া হলো:
- প্রথমে brta.gov.bd ওয়েবসাইটে যান।
- ওয়েবসাইটে গেলে “লাইসেন্স স্ট্যাটাস” অপশনটি নির্বাচন করুন।
- তারপর আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর এবং মোবাইল নম্বর দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করুন।
- নিবন্ধন সফলভাবে সম্পন্ন হলে আপনার লাইসেন্সের বিস্তারিত তথ্য দেখতে পারবেন।
এই পদ্ধতিতে লাইসেন্সের অবস্থা, বৈধতা এবং মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ সহজেই জানা যায়।
৩. মোবাইল নাম্বার দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক
মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করা একটি অত্যন্ত কার্যকর এবং সহজ মাধ্যম। এই পদ্ধতিতে আপনাকে এসএমএস পাঠিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্সের অবস্থা জানতে হয়। নিম্নে ধাপগুলো দেওয়া হলো:
- প্রথমে মোবাইলের মেসেজ অপশনে যান।
- ক্যাপিটাল লেটারে অর্থাৎ বড় হাতের অক্ষরে DL লিখুন।
- এরপর একটি স্পেস দিয়ে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর লিখুন।
- তারপর ২৬৯৬৯ অথবা 01552146222 নম্বরে এসএমএসটি পাঠিয়ে দিন।
মেসেজ পাঠানোর পর আপনার লাইসেন্সের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একটি উত্তর আসবে।
৪. ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার সফটওয়্যার
ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সফটওয়্যার হলো BRTA DL Checker। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে রেফারেন্স নাম্বার বা ড্রাইভিং লাইসেন্স নাম্বার এবং জন্ম তারিখ প্রবেশ করিয়ে সহজেই লাইসেন্স চেক করা যায়। অ্যাপটি ব্যবহার করার জন্য:
- প্রথমে BRTA DL Checker অ্যাপ ইনস্টল করুন।
- অ্যাপে রেফারেন্স নাম্বার এবং জন্ম তারিখ দিন।
- “সার্চ” বোতামে ক্লিক করুন এবং আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সের তথ্য দেখতে পাবেন।
এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা খুবই সহজ এবং যে কোন সময় লাইসেন্স চেক করার জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকর।
নাম দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক
অনেকে মনে করেন যে শুধুমাত্র নাম ব্যবহার করে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করা সম্ভব। কিন্তু বিআরটিএ এই ধরনের কোনো সিস্টেম এখনও চালু করেনি, কারণ একই নামে অনেক মানুষ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে থাকে। এর ফলে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। তাই নাম দিয়ে লাইসেন্স চেক করার সুযোগ না থাকলেও অন্যান্য পদ্ধতিতে (যেমন রেফারেন্স নাম্বার বা মোবাইল নাম্বার) সহজেই লাইসেন্স যাচাই করা যায়।
অনলাইন পদ্ধতির সুবিধা এবং নিরাপত্তা
অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার পদ্ধতি বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয়। এর কয়েকটি প্রধান সুবিধা হল:
- সুবিধাজনক: অনলাইনে চেক করার মাধ্যমে আপনাকে বিআরটিএ অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না।
- দ্রুত সেবা: কয়েক মিনিটের মধ্যেই আপনি আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সের অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
- নির্ভুল তথ্য: সরকারি ডাটাবেসের সাথে সরাসরি সংযুক্ত থাকায়, অনলাইনে প্রদত্ত তথ্য সঠিক এবং নির্ভুল হয়।
তবে, অনলাইন পদ্ধতি ব্যবহার করার সময় আপনার ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ব্যবহার করার সময় নিশ্চিত করতে হবে যে আপনি নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য সাইট বা অ্যাপ ব্যবহার করছেন।
শেষ কথা
ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার জন্য বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে, যার মধ্যে অনলাইন পদ্ধতিগুলো সবচেয়ে সুবিধাজনক এবং সহজলভ্য। বাংলাদেশের সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা এবং যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৈধ লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানো অপরাধ, এবং এ থেকে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়তে পারে। তাছাড়া, অবৈধ বা ঘুষের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই সঠিক ও বৈধ পদ্ধতিতে ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করা উচিত এবং সময়মতো লাইসেন্স চেক করা উচিত।
আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সের বৈধতা নিশ্চিত করতে ধৈর্য ধরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। বৈধ পন্থায় ড্রাইভিং লাইসেন্স পেলে, তা আপনাকে সড়কে চালানোর সময় নিরাপদ রাখবে এবং আইনত সুরক্ষিত করবে। সড়ক নিরাপত্তায় আপনার অংশগ্রহণই আমাদের সবাইকে একটি নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা গড়তে সাহায্য করবে।
ধন্যবাদ!