বাংলাদেশে অনেক প্রজাতির সাপ বসবাস করে, তবে কিছু সাপের বিষ খুবই প্রণঘাতী হতে পারে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বিষাক্ত সাপের নাম হলো রাসেল ভাইপার (Russell’s Viper) এবং কোবরা (Cobra)।
রাসেল ভাইপার (Russell’s Viper)
রাসেল ভাইপার, বৈজ্ঞানিক নাম Daboia russelii, একটি প্রখর বিষাক্ত সাপ যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়। এর দংশন মানুষের জীবনকে চরম ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারে। রাসেল ভাইপার সাধারণত শুষ্ক এলাকা, গ্রামাঞ্চল, এবং চাষাবাদের জমিতে দেখা যায়। এরা সাধারণত রাতে শিকার করে এবং তাদের দংশন অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং প্রাণঘাতী হতে পারে।
রাসেল ভাইপার বিষের প্রভাব
রাসেল ভাইপারের বিষে সাধারণত হেমোটক্সিন থাকে, যা রক্তের জমাট বাঁধার ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। এর ফলে অভ্যন্তরীণ রক্তপাত হতে পারে এবং প্রায়শই কিডনি বিকল হয়ে যায়। রাসেল ভাইপারের দংশনের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে তীব্র ব্যথা, ফোলা, রক্তপাত, এবং বমি।
কোবরা (Cobra)
বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রজাতির কোবরা পাওয়া যায়, যার মধ্যে অন্যতম হলো ভারতীয় কোবরা (Naja naja)। কোবরা তাদের ফণা বিস্তৃত করার ক্ষমতার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এরা সাধারণত বন, চাষাবাদের জমি, এবং গ্রামাঞ্চলে দেখা যায়।
কোবরা বিষের প্রভাব
কোবরা বিষ সাধারণত নিউরোটক্সিন সমৃদ্ধ, যা স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে। কোবরার দংশনের ফলে স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, যেমন পেশির কর্মক্ষমতা হ্রাস, শ্বাসকষ্ট, এবং মারাত্মক ক্ষেত্রে শ্বাসযন্ত্রের বিকলতা। কোবরার দংশনের পর দ্রুত চিকিৎসা না পেলে মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে।
অন্যান্য বিষাক্ত সাপ
রাসেল ভাইপার এবং কোবরা ছাড়াও, বাংলাদেশে আরও কিছু বিষাক্ত সাপ পাওয়া যায়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ক্রেইট (Krait) এবং স পাইড ভাইপার (Pit Viper)।
ক্রেইট (Krait)
ক্রেইট, বৈজ্ঞানিক নাম Bungarus caeruleus, একটি অত্যন্ত বিষাক্ত সাপ যা বিশেষ করে রাতের বেলা সক্রিয় থাকে। ক্রেইটের বিষ নিউরোটক্সিক, যা স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে এবং সাধারণত দংশনের পর ব্যথাহীন থাকে, তবে বিষক্রিয়া ধীরে ধীরে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
স পাইড ভাইপার (Pit Viper)
স পাইড ভাইপার বা Trimeresurus প্রজাতির সাপও বাংলাদেশের বনাঞ্চলে এবং পাহাড়ি এলাকায় পাওয়া যায়। এদের বিষ সাধারণত হেমোটক্সিক এবং দংশনের ফলে প্রচুর ব্যথা, ফোলা এবং রক্তপাত হতে পারে।
সাপের দংশন থেকে নিরাপত্তা ও প্রতিকার
বাংলাদেশে সাপের দংশন একটি সাধারণ ঘটনা, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। সাপের দংশন থেকে বাঁচতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। চাষাবাদ করার সময় সঠিক পোশাক পরা, রাতে বাইরে চলাচলের সময় টর্চ ব্যবহার করা এবং সাপ দেখলে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
সাপের দংশনের পর প্রথমিক চিকিৎসা হিসেবে আক্রান্ত ব্যক্তিকে শান্ত রেখে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত। দংশনের জায়গায় চাপে বাঁধা বা কাটাছেঁড়া করা থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ এতে বিষ শরীরের অন্যান্য অংশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
প্রাথমিক চিকিৎসা:
- শান্ত থাকুন এবং দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে যান: কামড়ের পর যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা কেন্দ্রে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন।
- কামড়ের জায়গাটি স্থির রাখুন: কামড়ের জায়গাটি যতটা সম্ভব কম নড়াচড়া করুন। হৃৎপিণ্ডের স্তরের নিচে রাখুন।
- সাফ গজ বা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিন: কামড়ের জায়গাটি পরিষ্কার কাপড় বা গজ দিয়ে ঢেকে দিন, তবে খুব শক্ত করে বাঁধবেন না।
- চাপে বাঁধা এড়িয়ে চলা: সাপের দংশনের স্থানে চাপে বাঁধা উচিত নয়, কারণ এতে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হতে পারে এবং ক্ষতি বাড়তে পারে।
- বিষ শোষণ করার চেষ্টা করবেন না: কামড়ের জায়গা কাটার বা চুষে বিষ বের করার চেষ্টা করবেন না।
- দ্রুত অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ: চিকিৎসা কেন্দ্রে পৌঁছানোর পর দ্রুত অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের ব্যবস্থা করুন।
শেষ কথা
বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রজাতির বিষাক্ত সাপ রয়েছে, তবে রাসেল ভাইপার এবং কোবরা বিশেষভাবে প্রণঘাতী। সাপের দংশন থেকে রক্ষা পেতে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রাথমিক চিকিৎসার গুরুত্ব অপরিসীম। সঠিক জ্ঞান এবং সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে সাপের দংশনজনিত বিপদ থেকে বাঁচা সম্ভব।