মা দিবস কবে ২০২৫

মা দিবস কবে

মা—এ এক অমোঘ শব্দ, যা অনুভূতির গভীরতা ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রতীক। যিনি আমাদেরকে পৃথিবীর আলো দেখান, জীবনের প্রথম পাঠ দেন এবং সারা জীবন আমাদের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেন, তিনি হলেন মা। মা হলেন সেই যোদ্ধা, যিনি আমাদের জন্য নিরন্তর লড়াই করেন, কখনও সন্তানকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করেন, কখনও নিঃস্বার্থভাবে সবকিছু ত্যাগ করেন। মা শব্দটির সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের জীবনের শুরুর গল্প। আমরা যখন পৃথিবীতে আসি, তখন থেকেই আমাদের যত্ন ও ভালোবাসায় ভরিয়ে তোলেন মা। তিনি শুধু গর্ভধারিণী নন, তিনি হচ্ছেন প্রথম শিক্ষক, প্রথম বন্ধু এবং আমাদের জীবনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল।

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Channel Join Now

ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে মায়ের মর্যাদা অপরিসীম। হাদিসে বলা হয়েছে, “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।” এর দ্বারা বোঝানো হয়, মায়ের সন্তুষ্টি ও সেবা করা আমাদের জন্য জান্নাতের পথ। এ কথার অন্তর্নিহিত মানে হলো, মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও যত্ন করাই আমাদের জীবনের অন্যতম দায়িত্ব।তবে, আধুনিক সমাজে মা দিবসের প্রয়োজনীয়তা নতুন মাত্রা পেয়েছে। মা দিবস এক বিশেষ উপলক্ষ যেখানে সারা বিশ্বে মায়েদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়। এবার, চলুন জেনে নেওয়া যাক মা দিবসের ইতিহাস, তা কখন এবং কীভাবে পালন করা হয়।

মা দিবসের ইতিহাস

মা দিবসের ইতিহাস বেশ পুরনো। সর্বপ্রথম ১৮৭০ সালে জুলিয়া ওয়ার্ড নামক একজন নারীবাদী কর্মী এবং কবি মায়েদের সম্মানে একটি দিবস পালনের ডাক দেন। যদিও তার প্রচেষ্টায় শুরু হওয়া মা দিবসের উদযাপন ১০ বছর পর বন্ধ হয়ে যায়, তার পরেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। পরবর্তীতে, ১৯০৫ সালে আমেরিকার স্কুল শিক্ষিকা আনা জার্ভিস তার মাকে সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে আবার মা দিবস পালনের উদ্যোগ নেন। তিনি তার মা অ্যান মেরি রিভস জার্ভিসের মৃত্যুর পর তার স্মরণে এ দিবসটি বড় পরিসরে উদযাপন করেন। তার মায়ের মানবসেবা ও সমাজসেবার জন্য তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে মা দিবসকে তিনি জনসাধারণের সামনে তুলে ধরেন। ধীরে ধীরে তার প্রচেষ্টা সফল হয় এবং ১৯০৮ সালে পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম মা দিবস উদযাপন করা হয়, যেখানে শত শত শিশু এবং তাদের মায়েরা অংশগ্রহণ করেন।

মা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

১৯১৪ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন আনুষ্ঠানিকভাবে মা দিবসকে একটি জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। তার নির্দেশ অনুযায়ী মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস পালনের জন্য আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মা দিবস একটি বিশেষ দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়।ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও মা দিবস দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। যুক্তরাজ্য, ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস পালিত হয়। তবে বিভিন্ন দেশে এর পালনকাল ও রীতিনীতি কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।

মা দিবস কবে ২০২৫

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মা দিবসের গুরুত্ব ক্রমবর্ধমান। যদিও আমাদের দেশে মায়েদের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন কোনো নির্দিষ্ট দিনে সীমাবদ্ধ নয়, তবুও আন্তর্জাতিক মা দিবস পালনের মাধ্যমে মায়ের প্রতি আমাদের দায়িত্বের গুরুত্ব আবারও মনে করিয়ে দেয়। ২০২৫ সালে বাংলাদেশে মা দিবস পালিত হবে ১১ মে, যা পড়েছে রবিবার। মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার হিসেবে এই দিনটি মা দিবস উদযাপনের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই দিনটি আন্তর্জাতিক মা দিবস হিসেবেও স্বীকৃত, ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একই দিনে মা দিবস উদযাপিত হবে। মায়ের প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার প্রকাশের জন্য এই বিশেষ দিনটিকে অনেকেই ফুল, কার্ড বা কেক দিয়ে উদযাপন করে থাকেন। অনেকে আবার বিশেষভাবে মায়ের জন্য কিছু করতে পছন্দ করেন—হতে পারে সেটি কোনো ভালো খাবার রান্না করা, অথবা সারা দিন মায়ের প্রিয় কাজগুলোতে তাকে সহায়তা করা।

মা দিবস উদযাপনের রীতিনীতি ভালোবাসা প্রকাশের নানান উপায়

মা দিবস শুধুমাত্র একটি দিন নয়, এটি একটি উপলক্ষ, যা আমাদের মায়ের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার প্রকাশ ঘটায়। যদিও মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রতিদিনই থাকা উচিত, কিন্তু এই বিশেষ দিনে আমরা মায়ের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা প্রকাশের জন্য একটু বাড়তি যত্ন নিতে পারি।

  • মাকে নিয়ে বিশেষ কিছু পরিকল্পনাঃ মা দিবসে আমরা মায়ের জন্য নানা উপহার দিতে পারি, তবে উপহারগুলোর পেছনে মায়ের প্রতি ভালোবাসা ও যত্নই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কার্ডে লেখা কিছু আন্তরিক বার্তা বা মায়ের প্রিয় ফুল এনে দেওয়া তার প্রতি ভালোবাসার সেরা প্রকাশ হতে পারে। এছাড়া মায়ের জন্য একটি বিশেষ দিন পরিকল্পনা করে তাকে সারা দিন আনন্দ দেওয়া যেতে পারে।
  • মায়ের প্রতি ভালোবাসার প্রতিফলন প্রতিদিনের জীবনেওঃ মা দিবসের গুরুত্ব শুধু একটি দিনে সীমাবদ্ধ নয়। প্রতিদিনই মায়ের প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করা উচিত। মায়ের প্রতি যত্নশীল হওয়া, তার প্রয়োজন মেটানো এবং তাকে সাপোর্ট দেওয়াই সন্তানের দায়িত্ব। প্রতিদিনই তাকে ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে সুখী করা যেতে পারে, যেমন—তার সাথে সময় কাটানো, তার পছন্দের খাবার রান্না করা অথবা তার কোনো কাজে সাহায্য করা।
  • মা আমাদের জীবনের প্রথম শিক্ষিকাঃ মা শুধু আমাদের জন্মদাত্রী নন, তিনি আমাদের জীবনের প্রথম শিক্ষিকা। শিশু জীবনের শুরুতে তার মায়ের থেকেই শিখতে শুরু করে। মায়ের শিক্ষা শুধুমাত্র বইয়ের জ্ঞান নয়, জীবনের প্রতিটি ধাপে সন্তানের জন্য মূল্যবান। শিশুকে মানবিকতা, নৈতিকতা, ভালোবাসা ও সঠিকভাবে জীবনযাপনের শিক্ষা দেওয়ার কাজটি মা সবচেয়ে আগে করেন। মায়ের সঙ্গে আমাদের প্রথম কথোপকথন শুরু হয়, প্রথম হাসি বিনিময় হয়, এমনকি জীবনকে সঠিকভাবে বোঝার শিক্ষা মায়ের কাছ থেকেই পাওয়া যায়। মায়ের মূল্যবান শিক্ষাই ভবিষ্যতে আমাদের জীবনের ভিত্তি স্থাপন করে।

ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে মায়ের মর্যাদা

ইসলামে মায়ের মর্যাদা অত্যন্ত উঁচুতে স্থাপিত। হাদিসে বলা হয়েছে, “মা, বাবা ও গুরুজনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করো।” মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কৃতজ্ঞতার কথা কুরআনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। হাদিসে মহানবী (সাঃ) বলেছেন, “তোমার মাকে সম্মান করো, তারপর তোমার বাবাকে।” ইসলাম ধর্মে মায়ের মর্যাদা এতটাই উঁচুতে যে বলা হয়েছে, “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত।”মাকে সেবা করা এবং তার খেদমত করা ইসলামে সন্তানের জন্য ফরজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মায়ের প্রতি ভালো ব্যবহার, যত্নশীলতা এবং সম্মান প্রদর্শন করা ইসলামে একজন মানুষের জান্নাতের পথকে সুগম করে। তাই ইসলামে মাকে সম্মান ও ভালোবাসা দেখানো শুধু সামাজিক দায়িত্ব নয়, এটি একটি ধর্মীয় নির্দেশনা।

শেষ কথা

মা দিবসের মূল শিক্ষা হলো মায়ের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার প্রকাশ। মা আমাদের জীবনের এমন একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যিনি আমাদের জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে পারেন। তার নিঃস্বার্থ ভালোবাসার বদলে আমরা যে সামান্যটুকু করতে পারি, তা হলো তার প্রতি যথাযথ সম্মান ও ভালোবাসা প্রদর্শন। মা দিবস একটি বিশেষ দিন, তবে মায়ের

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top