বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হল কক্সবাজার। দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত, মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য, এবং আকর্ষণীয় স্থাপত্যশৈলীর জন্য দেশ-বিদেশ থেকে প্রতি বছর অসংখ্য পর্যটক এখানে ভিড় করে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার অনেক উপায় আছে, তবে ট্রেন যাত্রা অনেকের কাছেই পছন্দের। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে সমুদ্রের সৈকতিক শহর কক্সবাজারে যাওয়ার জন্য ট্রেন সারাদেশে একটি মৌলিক পরিবহন মাধ্যম। সহজলভ্যতা, গাড়ির তুলনায় খুব কম খরচ এবং সুবিধাজনক । ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যটন স্পটে যাওয়ার জন্য ট্রেন সেবা ব্যবহার করা অনেকটা আনন্দদায়ক।
ঢাকা টু কক্সবাজার ট্রেন ভাড়া
ঢাকা থেকে কক্সবাজারে নতুন ট্রেন যোগাযোগের ব্যবস্থা করা হয়েছে যা যাত্রীদের ভ্রমণকে স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং সাশ্রয়ী করেছে। ২০২৪ সালে চালু হওয়া আন্তঃনগর ট্রেনের ভাড়া বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা হয়েছে, যা যাত্রীদের আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী বেছে নেওয়ার সুযোগ দেয়। ঢাকা থেকে কক্সবাজার ট্রেন ভাড়া নির্ভর করে আপনি যে ট্রেনের শ্রেণীতে ভ্রমণ করতে চান তার উপর।
মেইল ট্রেনঃ
- সর্বনিম্ন ভাড়া: ১২৫ টাকা
- সর্বোচ্চ ভাড়া: ১৭০ টাকা
আন্তঃনগর ট্রেনঃ
- শোভনঃ ৪২০ টাকা
- শোভন চেয়ারঃ ৫০৫ টাকা
- প্রথম সিটঃ ৬৭০ টাকা
- প্রথম বার্থঃ ১,০০০ টাকা
- স্নিগ্ধাঃ ৯৬১ টাকা
- এসি সিটঃ ১,১৫০ টাকা
- এসি বার্থঃ ১,৭২৫ টাকা
এই ভাড়ার তালিকা থেকে বোঝা যায় যে, সাধারণ শোভন শ্রেণী থেকে শুরু করে এসি বার্থ পর্যন্ত যাত্রীদের জন্য বিভিন্ন বিকল্প রয়েছে। যারা আরামদায়ক ভ্রমণ পছন্দ করেন তারা এসি সিট কিংবা এসি বার্থ বেছে নিতে পারেন, আর যারা তুলনামূলক কম খরচে যাতায়াত করতে চান, তারা শোভন শ্রেণী বা শোভন চেয়ারে যাত্রা করতে পারেন।
ট্রেনের সময়সূচী
ঢাকা থেকে কক্সবাজার রুটে নতুন চালু হওয়া ট্রেনগুলোর সময়সূচি বেশ নির্দিষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট সময়ে যাত্রা শুরু করে ও শেষ করে। বর্তমানে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে নিয়মিতভাবে দুটি ট্রেন চলাচল করছে।
সময়সূচি:
- ঢাকা থেকে কক্সবাজার:
- রাত ১০:৩০ মিনিটে ঢাকা থেকে ছাড়ে এবং ভোর ৭:২০ মিনিটে কক্সবাজারে পৌঁছায়।
- সকাল ৬:১৫ মিনিটে ঢাকা থেকে ছাড়ে এবং বিকেল ৩:০০ টায় কক্সবাজারে পৌঁছায়।
- কক্সবাজার থেকে ঢাকা:
- দুপুর ১২:৩০ মিনিটে কক্সবাজার থেকে ছাড়ে এবং রাত ৯:১০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছায়।
- রাত ৮:০০ টায় কক্সবাজার থেকে ছাড়ে এবং রাত ৪:৩০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছায়।
ট্রেনে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে কত সময় লাগে
২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধনের মাধ্যমে ট্রেনে কক্সবাজার যাত্রা করা আরও সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়ে উঠেছে। ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেনে কক্সবাজার পৌঁছাতে সময় লাগে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা, যা বাসের চেয়ে অনেক কম। প্রায় ৭-৮ ঘণ্টার ভ্রমণে আপনি কক্সবাজারের মনোরম সৈকতে পৌঁছে যেতে পারেন। ননস্টপ আন্তঃনগর ট্রেনের মাধ্যমে সরাসরি যাতায়াতের সুযোগ থাকায় এটি বাসের চেয়ে অনেক সময় সাশ্রয়ী এবং বিমানের তুলনায় ব্যয়সাশ্রয়ী।
নতুন ট্রেনসমূহ প্রবাল এক্সপ্রেস ও আরও ট্রেন
ঢাকা থেকে কক্সবাজার রুটে বর্তমানে চালু থাকা ট্রেনগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো প্রবাল এক্সপ্রেস। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এই ট্রেনটি নতুনভাবে চালু করা হয়। এছাড়াও রেল কর্তৃপক্ষ আরও কিছু ট্রেনের প্রস্তাব করেছে যা পর্যটকদের জন্য সুবিধাজনক হবে।
প্রস্তাবিত ট্রেনের নামসমূহ:
- প্রবাল এক্সপ্রেস
- হিমছড়ি এক্সপ্রেস
- কক্সবাজার এক্সপ্রেস
- ইনানী এক্সপ্রেস
- লাবণী এক্সপ্রেস
- সেন্ট মার্টিন এক্সপ্রেস
এই ট্রেনগুলোর মধ্যে কয়েকটি ইতোমধ্যেই চালু রয়েছে এবং বাকিগুলো শীঘ্রই চালু হওয়ার অপেক্ষায়। প্রতিটি ট্রেনই আরামদায়ক এবং পর্যটকদের যাত্রাকে নির্বিঘ্ন করতে ডিজাইন করা হয়েছে।
ট্রেনের যাতায়াত সুবিধা
- ট্রেন যাত্রা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এবং আরামদায়ক।
- বিমানের তুলনায় ট্রেনের টিকিট অনেক কম দামি।
- বাসের তুলনায় ট্রেনে যাত্রা করতে সময় লাগে কম।
- ট্রেনে যাত্রা করার সময় আপনি মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।
কক্সবাজারের মতো পর্যটন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য ট্রেন সেবা অনেকটা দরকারী, একজন ভ্রমণকারীর জন্য সহজলভ্য সময় পরিষেবা প্রদান করে। এটি পারিবারিক ভ্রমণে একটি সহায়ক হতে পারে, যাত্রার সময়ে আপনার প্রিয় লোকের সঙ্গে আপনার সময় কাটানোর সুযোগ প্রদান করে।
কক্সবাজারের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র
কক্সবাজার শুধুমাত্র একটি সমুদ্র সৈকত নয়, এখানে আরও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে যা পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। কক্সবাজারে ঘুরতে আসা পর্যটকরা শুধু সৈকতে সময় কাটান না, বরং এর আশেপাশের স্থানগুলোতেও ভ্রমণ করেন।কক্সবাজারে ঘুরে আসার সময় আপনি নিচের স্থানগুলো দেখতে পারেন:
- কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত: বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতগুলোর মধ্যে একটি।
- হিমছড়ি: সুন্দর জলপ্রপাত এবং পার্বত্য এলাকা।
- ইনানী সমুদ্র সৈকত: একটি প্রশান্ত এবং নির্জন সমুদ্র সৈকত।
- আদালগজ দ্বীপ: মোং পুজার জন্য বিখ্যাত।
- কক্সবাজার চিড়িয়াখানা: বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী দেখা যাবে।
- কুতুবদিয়া জাতীয় উদ্যান: ম্যানগ্রোভ বন এবং বন্যপ্রাণী দেখা যাবে।
- রামু বৌদ্ধ মন্দির: কক্সবাজারের একটু বাইরে অবস্থিত এই মন্দিরটি একটি ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় নিদর্শন।
- সেন্ট মার্টিন দ্বীপ: বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ, যা কক্সবাজার থেকে নৌযানে যাওয়া যায়। এটি পর্যটকদের জন্য একটি বিশাল আকর্ষণীয় গন্তব্য।
কক্সবাজার ভ্রমণের সেরা সময়
কক্সবাজার ভ্রমণের জন্য বছরের যেকোনো সময় উপযুক্ত, তবে শীতকালে (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) এখানে ভ্রমণ করতে সবচেয়ে আরামদায়ক। এই সময় আবহাওয়া শীতল এবং মনোরম থাকে, যা সৈকত ভ্রমণের জন্য একেবারে আদর্শ। গ্রীষ্মকালেও ভ্রমণ করা যায়, তবে বর্ষাকালে সমুদ্রের ঢেউ এবং অস্বাভাবিক আবহাওয়ার কারণে কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
কক্সবাজার ভ্রমণের টিপস
কক্সবাজারে ভ্রমণের সময় কিছু বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত, যাতে আপনার ভ্রমণ আরও আনন্দদায়ক হয়।
- অগ্রিম টিকিট কাটা: বিশেষ করে শীত মৌসুমে পর্যটকদের ভিড় বেশি থাকে, তাই ট্রেনের টিকিট আগেই বুক করে রাখুন।
- পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ভ্রমণ করুন: কক্সবাজারে দেখার মতো অনেক কিছু রয়েছে, তাই কমপক্ষে ২-৩ দিনের পরিকল্পনা রাখুন।
- আবহাওয়ার খোঁজ রাখুন: বর্ষাকালে ভ্রমণের সময় আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে নিন, যাতে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হতে না হয়।
- স্থানীয় খাবার উপভোগ করুন: কক্সবাজারে বিভিন্ন ধরনের সি-ফুড খুবই জনপ্রিয়। স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিতে ভুলবেন না।
শেষ কথা
ঢাকা থেকে কক্সবাজার ট্রেন সেবার মাধ্যমে যাতায়াত এখন আরও সহজ, আরামদায়ক এবং সাশ্রয়ী হয়েছে। ট্রেনের ভাড়া ও সময়সূচি সম্পর্কে সঠিক তথ্য জেনে আপনি যাত্রাপথে অনেক ঝামেলা এড়াতে পারবেন। কক্সবাজার ভ্রমণের জন্য পরিকল্পনা করছেন? তাহলে এখনই ট্রেনের টিকিট কেটে নিন এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা কক্সবাজারে আপনার ছুটির দিনগুলো উপভোগ করুন।
আপনার ভ্রমণ যদি কোনোভাবে সহায়ক হয়ে থাকে, তাহলে আশেপাশের লোকদের সাথে এই তথ্যগুলো শেয়ার করুন। কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকত আপনার জন্য অপেক্ষা করছে!
ধন্যবাদ!