
দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্যতম বিখ্যাত ও সমৃদ্ধ শহর, যাকে অনেকেই বিলাসবহুল জীবনযাপনের প্রতীক হিসেবে জানেন। আকাশচুম্বী ভবন, বিলাসবহুল শপিং মল, আর বিশ্বখ্যাত গোল্ড মার্কেটের কারণে দুবাই সারা বিশ্বের পর্যটকদের কাছে এক প্রধান গন্তব্য। তবে দুবাইয়ের উত্থান ও উন্নতির পেছনে রয়েছে লক্ষ লক্ষ বিদেশী শ্রমিকের অবদান, যারা কঠোর পরিশ্রম করে এই শহরের অর্থনীতি এবং অবকাঠামোকে শক্তিশালী করেছে। বর্তমানে প্রায় ৯০ লাখেরও বেশি বিদেশী শ্রমিক সংযুক্ত আরব আমিরাতে কাজ করছেন, যার বড় একটি অংশ দুবাইতে অবস্থিত। এই নিবন্ধে আমরা আলোচনা করব দুবাইয়ের বিভিন্ন কাজের সুযোগ, বেতন কাঠামো, ভিসার খরচ, এবং যেসব খাতে বেতন বেশি পাওয়া যায় সেই সম্পর্কে বিশদ বিবরণ।
দুবাই সর্বনিম্ন বেতন কত
দুবাইতে কাজ করতে গেলে প্রথমেই জানতে হবে যে, শহরটির বিভিন্ন ক্যাটাগরির কাজ অনুযায়ী বেতনের ভিন্নতা রয়েছে। সাধারণত, নিম্নস্তরের কাজের বেতন কম হয়, তবে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অনুযায়ী বেতন বাড়তে থাকে। বর্তমানে, দুবাইয়ে শ্রমিকের ন্যূনতম বেতন প্রায় ৩৮ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫৭ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। যেসব সাধারণ কাজের জন্য মানুষ দুবাইতে যায়, তাদের বেতন সাধারণত ১২০০ থেকে ১৮০০ দিরহামের মধ্যে থাকে, যা প্রায় ৩৮,০০০ থেকে ৫৭,০০০ টাকা। তবে, উচ্চতর পদে বা বিশেষায়িত কাজে এই বেতনের পরিমাণ ২২০০ থেকে ২৭০০ দিরহাম পর্যন্ত হতে পারে, যা প্রায় ৭০ হাজার থেকে ৮৬ হাজার টাকার সমান।
আরও পড়ুনঃ দুবাই যেতে কত টাকা লাগে
বিভিন্ন পেশায় বেতন কাঠামো
- ওয়েটার: একজন ওয়েটারের বেতন সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে থাকে।
- ইলেকট্রিশিয়ান: একজন ইলেকট্রিশিয়ানের বেতন প্রায় ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।
- ক্লিনার: ক্লিনারের বেতন শুরু হয় প্রায় ৩৫ হাজার টাকা থেকে, যা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত যেতে পারে।
- মেকানিক: একজন মেকানিকের বেতন প্রায় ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে।
- ডেলিভারি ম্যান: ডেলিভারি ম্যানের বেতন সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।
অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে বেতন বৃদ্ধি
দুবাইয়ের কর্মক্ষেত্রে প্রাথমিক বেতন তুলনামূলক কম হলেও, দীর্ঘমেয়াদে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বেতন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। যারা দীর্ঘ সময় ধরে একই খাতে কাজ করেন এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, তারা উচ্চতর বেতন পেয়ে থাকেন। বিশেষ করে যেসব শ্রমিকরা দক্ষ এবং অভিজ্ঞ, তাদের বেতন তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। যেমন, একজন দক্ষ নির্মাণ শ্রমিক বা ইলেকট্রিশিয়ানের বেতন অনেক বেশি হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ দুবাই ভিসার দাম কত
কোন খাতগুলোতে বেশি বেতন পাওয়া যায়
দুবাইয়ের শ্রমবাজারে কিছু বিশেষ খাত রয়েছে যেখানে বেতন অন্যান্য খাতের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে। এসব খাতে কাজের পরিবেশ, দক্ষতা এবং ওভারটাইমের সুযোগের কারণে বেতন বেশি পাওয়া যায়।
১. গার্মেন্টস শিল্প
গার্মেন্টস খাতে শ্রমিকদের বেতন তুলনামূলক বেশি। বিশেষ করে যারা দীর্ঘ সময় ধরে এই খাতে কাজ করছেন, তারা ওভারটাইমের সুযোগ পেলে প্রতি মাসে প্রায় ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন।
২. শপিং মল ও রিটেইল সেক্টর
দুবাইয়ের বৃহত্তর শপিং মল এবং রিটেইল সেক্টরেও কাজের সুযোগ প্রচুর। বিক্রয়কর্মী, ক্যাশিয়ার, স্টক ম্যানেজারদের বেতন তুলনামূলকভাবে ভালো। এই খাতে কাজ করলে আপনি ন্যূনতম ৫০,০০০ টাকা থেকে শুরু করে আরও বেশি আয় করতে পারেন, বিশেষ করে বড় ব্র্যান্ডে কাজ করলে।
৩. নির্মাণ শিল্প
নির্মাণ শিল্পে কাজ করার চাহিদা দুবাইয়ে সবসময়ই রয়েছে। বড় বড় প্রকল্প এবং উন্নয়নমূলক কাজের কারণে এই খাতে শ্রমিকদের চাহিদা বেশি। এই খাতে অভিজ্ঞ শ্রমিকরা প্রতি মাসে প্রায় ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন।
৪. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও ক্লিনিং সার্ভিস
ক্লিনিং সার্ভিস খাতেও প্রচুর শ্রমিক কাজ করেন। যদিও বেতন অন্যান্য খাতের তুলনায় কম হতে পারে, তবে ওভারটাইমের সুযোগ থাকলে এখানে ভালো আয় করা সম্ভব। একজন ক্লিনারের বেতন প্রায় ৪০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে থাকে।
৫. ড্রাইভিং ও ডেলিভারি
ড্রাইভার এবং ডেলিভারি ম্যানদের বেতনও বেশ ভালো। বিশেষ করে ডেলিভারি কাজে যারা নিয়োজিত তারা বেতন ছাড়াও টিপস বা অতিরিক্ত ইনসেনটিভ পেতে পারেন, যা তাদের মাসিক আয়কে বৃদ্ধি করে। এই খাতে কাজ করলে আপনি প্রায় ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশ থেকে দুবাই যেতে কত সময় লাগে
দুবাই যেতে কত টাকা লাগে
দুবাইতে কাজ করতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন একটি বৈধ ভিসা, যা নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির উপর নির্ভর করে। সাধারণত, কাজের উদ্দেশ্যে দুবাইতে যাওয়ার জন্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসা সবচেয়ে প্রচলিত। ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে গেলে প্রার্থীদের বেশ কিছু অর্থ খরচ করতে হয়। বর্তমানে, দুবাইতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা তৈরির জন্য ন্যূনতম প্রায় ৫ লাখ টাকা থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়ে থাকে। ভিসা খরচ ছাড়াও, দুবাইতে যাওয়ার জন্য বিমান ভাড়া এবং অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচ মিলিয়ে প্রায় ৮ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। তবে এসব খরচ নির্ভর করে আপনি কোন ক্যাটাগরির ভিসা নিচ্ছেন এবং কোন সংস্থার মাধ্যমে যাচ্ছেন।
প্রতারণার ফাঁদ ও নিরাপদ উপায়ে কাজের সন্ধান
অনেক সময় অসাধু দালাল বা এজেন্সিগুলো লোভনীয় বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে প্রার্থীদের কাছ থেকে প্রচুর অর্থ আদায় করে এবং পরে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে। এজন্য, কোনো কাজের অফার গ্রহণ করার আগে যথাযথ তদন্ত ও যাচাই-বাছাই করা জরুরি। সরকার অনুমোদিত এজেন্সি বা পরিচিত সংস্থার মাধ্যমে ভিসা ও কাজের ব্যবস্থা করাই নিরাপদ।
আরও পড়ুনঃ দুবাই ভিসা চেক অনলাইন
শেষ কথা
দুবাই, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী ও উন্নত শহর, যেখানে কাজের সুযোগ প্রচুর। বিভিন্ন খাতে শ্রমিকদের চাহিদা সবসময়ই থাকে এবং বেতন কাঠামোও কাজের ধরন ও দক্ষতার উপর নির্ভরশীল। তবে, সেখানে কাজ করতে গেলে অবশ্যই বৈধ ভিসা এবং সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যাওয়া জরুরি। অসাধু দালাল ও প্রতারণার ফাঁদ থেকে দূরে থাকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যারা পরিশ্রমী এবং অভিজ্ঞ, তাদের জন্য দুবাই হতে পারে এক সম্ভাবনাময় শহর, যেখানে সঠিক পথে চললে অর্থনৈতিকভাবে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব।