বাংলাদেশে মিল্ক শেকের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি শুধুমাত্র স্বাদের জন্য নয়, বরং এর পুষ্টিগুণের কারণেও। যদিও বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিল্ক শেক পাওয়া যায়, তবে অনেকেই জানেন না ঠিক কত দামে এসব মিল্ক শেক পাওয়া যায়। এই নিবন্ধে আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিল্ক শেকের দাম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো, সেইসাথে মিল্ক শেকের উপকারিতা, প্রকারভেদ, এবং কিভাবে এগুলি গ্রহণ করা উচিত সে সম্পর্কেও কিছু তথ্য প্রদান করবো।
মিল্ক শেক এর দাম কত
বাংলাদেশে মিল্ক শেকের দাম সাধারণত ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০০ টাকার মধ্যে থাকে। তবে ব্র্যান্ড এবং মানভেদে এই দামের সীমা আরও বাড়তে পারে। কিছু ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে এই দাম ১০০০ টাকা বা তারও বেশি হতে পারে। নিম্নে কিছু মিল্ক শেকের দাম এবং বিবিধ ব্র্যান্ডের তালিকা দেওয়া হলো:
- ওয়েট গেইন মিল্ক শেক ফর হেলদি – দাম: ২০০ টাকা
- নেসকুইক ব্যানানা ফ্লেভার মিল্ক শেক – দাম: ৫৭৯ টাকা
- হেলথ গেইন মিল্ক শেক ন্যাচারাল ফুড – দাম: ৫৯৯ টাকা
- কমপ্লান চকোলেট মিল্ক শেক – দাম: ৬৪৭ টাকা
- ক্যালসাম নিউট্রিয়াস মিল্ক শেক – দাম: ৮৪০ টাকা
- হরলিক্স হট মেল্টেড মিল শেক পাউডার – দাম: ৯৮৭ টাকা
- কম্বো মিল্ক, চকোলেট, বাদাম শেক – দাম: ১১৯০ টাকা
- মিল্ক মালাই শেক ফর গুড হেলথ – দাম: ১১৯৯ টাকা
এই মিল্ক শেকগুলি বিভিন্ন অনলাইন শপ এবং সুপারস্টোর থেকে ক্রয় করা যায়। তবে এক দোকান থেকে আরেক দোকানে দাম কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে।
ওয়েট গেইন মিল্ক শেকের দাম ও উপকারিতা
ওয়েট গেইন মিল্ক শেকের দাম সাধারণত ২০০ টাকা থেকে শুরু করে কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। বিশেষ করে যাদের লক্ষ্য ওজন বৃদ্ধি, তাদের জন্য ওয়েট গেইন মিল্ক শেক বেশ কার্যকর। এ ধরণের মিল্ক শেক পাউডার পানিতে বা দুধের সাথে মিশিয়ে পান করলে শরীরের ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ওয়েট গেইন মিল্ক শেক কেনার সময় অবশ্যই এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। বেশিরভাগ ওয়েট গেইন মিল্ক শেকে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে যা শরীরের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
- ১ কেজি ওয়েট গেইন মিল্ক শেক: ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে দাম হতে পারে।
- ৫০০ গ্রাম ওয়েট গেইন মিল্ক শেক: ৭৫০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
মিল্ক শেকের পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা
মিল্ক শেক খাওয়া শুধু মুখরোচকই নয়, এর স্বাস্থ্য উপকারিতাও অপরিসীম। দুধ, চকোলেট, ফল, বাদাম ইত্যাদি মিশিয়ে তৈরি মিল্ক শেকে প্রচুর পুষ্টি উপাদান থাকে। নিচে এর কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
- ওজন বৃদ্ধি: মিল্ক শেকে থাকা প্রোটিন এবং ফ্যাট শরীরের ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক।
- ক্যালরি চাহিদা পূরণ: সারাদিনের প্রয়োজনীয় ক্যালরি সহজেই পূরণ করা যায়।
- পুষ্টি উপাদানের উৎস: দুধ ও ফলের মিশ্রণ থাকা এই পানীয়তে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেলস, এবং কার্বোহাইড্রেট।
- এনার্জি বুস্টার: যারা ফিটনেস রুটিন পালন করেন বা শারীরিক পরিশ্রম করেন, তাদের জন্য মিল্ক শেক একটি চমৎকার এনার্জি বুস্টার হিসেবে কাজ করে।
- সুস্থ হজম: সঠিক উপাদানের মিল্ক শেক হজমে সাহায্য করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে।
মিল্ক শেক কিভাবে তৈরি এবং গ্রহণ করবেন?
মিল্ক শেক তৈরি করার নিয়ম বেশ সহজ। পাউডারযুক্ত মিল্ক শেক হলে তা পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। তবে দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে এর স্বাদ ও পুষ্টিগুণ আরও বাড়ে। যারা চিনি এড়াতে চান, তারা চিনির বদলে প্রাকৃতিক মিষ্টি হিসেবে মধু ব্যবহার করতে পারেন। মিল্ক শেক তৈরি করতে চাইলে নিচের উপাদানগুলো যুক্ত করতে পারেন:
- দুধ (ঠাণ্ডা বা গরম)
- কলা, স্ট্রবেরি বা পছন্দমতো ফল
- চকোলেট পাউডার বা সিরাপ
- বাদাম, কাঠবাদাম বা অন্যান্য শুকনো ফল
মিল্ক শেকের ক্ষতিকর দিক
যদিও মিল্ক শেক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তবে অতিরিক্ত পরিমাণে তা পান করা শরীরের ক্ষতি করতে পারে। অতিরিক্ত ফ্যাট ও চিনিযুক্ত মিল্ক শেক নিয়মিত খেলে ওজন অত্যধিক বাড়তে পারে, যা ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে। তাই মিল্ক শেক পান করার সময় সবসময় পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করতে হবে।
মিল্ক শেক খাওয়ার সঠিক সময়
মিল্ক শেক খাওয়ার সঠিক সময়ের ওপরও এর কার্যকারিতা নির্ভর করে। সাধারণত সকালে খালি পেটে বা ওয়ার্কআউটের পরে মিল্ক শেক খাওয়া শরীরের জন্য সবচেয়ে উপকারী। কারণ, এ সময় শরীর পুষ্টি উপাদান শোষণ করতে সবচেয়ে সক্ষম থাকে। নিচে কিছু সেরা সময়ের উল্লেখ করা হলো যখন মিল্ক শেক খেলে আপনি সর্বোচ্চ উপকার পাবেন:
- সকালে: ব্রেকফাস্টের অংশ হিসেবে।
- ওয়ার্কআউটের পরে: শরীরের পুষ্টি ঘাটতি পূরণ করতে।
- বিকেলের স্ন্যাকস হিসেবে: দিনের মাঝামাঝি এনার্জি বুস্টার হিসেবে।
মিল্ক শেকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
মিল্ক শেক সাধারণত নিরাপদ এবং উপকারী হলেও, কিছু নির্দিষ্ট অবস্থায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন, ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স আছে এমন ব্যক্তিদের জন্য দুধভিত্তিক মিল্ক শেক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত চিনিযুক্ত মিল্ক শেকের ফলে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বাড়তে পারে। তাই যারা স্বাস্থ্যসচেতন, তারা চিনির মাত্রা কমিয়ে বা চিনিবিহীন পাউডার ব্যবহার করে মিল্ক শেক তৈরি করতে পারেন।
শেষ কথা
মিল্ক শেক বাংলাদেশে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, এবং এর পুষ্টিগুণ ও স্বাদ একে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিল্ক শেকের দাম জানার পর এখন আপনি সহজেই পছন্দমতো মিল্ক শেক বেছে নিতে পারবেন। তবে সবসময় মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত কিছুই ভালো নয়। তাই মিল্ক শেক নিয়মিত, তবে পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করুন, এবং সুস্থ থাকুন।
মিল্ক শেকের FAQ (প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী)
- মিল্ক শেক খেলে কি ওজন বাড়ে?
হ্যাঁ, নিয়মিতভাবে মিল্ক শেক খেলে ওজন বৃদ্ধি করা সম্ভব। বিশেষত যারা ওজন বাড়ানোর চেষ্টা করছেন, তাদের জন্য মিল্ক শেক একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। - মিল্ক শেক কিভাবে খেতে হয়?
মিল্ক শেক খাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো পাউডার মিশিয়ে দুধ বা পানিতে তৈরি করা। আপনি ফল, বাদাম, চকোলেট ইত্যাদি মিশিয়ে এটি আরও সুস্বাদু করতে পারেন। - মিল্ক শেক খেলে কি কোনো ক্ষতি হবে?
যদি আপনি নিয়মিত এবং পরিমিত পরিমাণে মিল্ক শেক খান, তবে কোনো ক্ষতি হবে না। তবে অতিরিক্ত খেলে কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। - কত দামে ভালো মানের মিল্ক শেক পাওয়া যায়?
বাংলাদেশে ২০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে ভালো মানের মিল্ক শেক পাওয়া যায়। তবে ব্র্যান্ডভেদে এই দাম বাড়তে বা কমতে পারে।