
কম্বোডিয়া, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যতম একটি দেশ, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিশ্বের বহু পর্যটকদের আকর্ষণ করে। দেশের আয়তন ১,৮১,০৩৫ বর্গকিলোমিটার। এর সীমানা উত্তর-পশ্চিমে থাইল্যান্ড, উত্তরে লাওস এবং পূর্বে ভিয়েতনামের সাথে সংযুক্ত। বর্তমান সময়ে কম্বোডিয়ার জনসংখ্যা ১৭ মিলিয়নেরও বেশি, যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের কারণে এটি একটি চমৎকার পর্যটন গন্তব্যস্থল।
আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে কম্বোডিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা করেন, তবে জানা জরুরি — টুরিস্ট, বিজনেস বা ওয়ার্ক ভিসার দাম কত, আবেদন প্রক্রিয়া কীভাবে চলে, এবং কোন কোন ডকুমেন্ট প্রয়োজন। এই লেখায় আপনি সব তথ্য এক জায়গায় পাবেন — সহজ ভাষায় এবং ধাপে ধাপে।
কম্বোডিয়াতে যাওয়ার বিভিন্ন ভিসা
কম্বোডিয়াতে ভিসা পেতে কিছু সহজলভ্য ক্যাটাগরির ভিসা রয়েছে। আপনাকে অবশ্যই সঠিক এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করে আবেদন করতে হবে। সরকারি বা প্রাইভেট এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা সংগ্রহ করতে পারেন। কোন দালালের সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজন নেই, কারণ এতে পরবর্তীতে সমস্যায় পড়তে পারেন।
বাংলাদেশ থেকে কম্বোডিয়া যেতে হলে কয়েকটি ভিসার মাধ্যমে আপনি যেতে পারেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ভিসা হলো:
- টুরিস্ট ভিসা: কম্বোডিয়ার সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে এই ভিসার প্রয়োজন।
- স্টুডেন্ট ভিসা: শিক্ষা গ্রহণের জন্য এই ভিসার প্রয়োজন হয়।
- ওয়ার্ক পারমিট ভিসা: কর্মসংস্থানের জন্য এই ভিসা প্রয়োজন।
- বিজনেস ভিসা: ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে কম্বোডিয়া গেলে এই ভিসা প্রয়োজন হয়।
- এক্সপ্রেস ভিসাঃ যাদের দ্রুত ভিসা প্রয়োজন, তারা অতিরিক্ত ফি দিয়ে এক্সপ্রেস ভিসা নিতে পারেন।
- মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসাঃ একাধিকবার কম্বোডিয়া যাতায়াতের জন্য প্রয়োজন হলে এই ভিসাটি নেওয়া যায়, যা সাধারণত এক বছরের জন্য বৈধ থাকে।
কম্বোডিয়া ভিসার দাম কত
কম্বোডিয়া তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত। অঙ্গকোর ভাটের মতো ঐতিহাসিক স্থান এবং টোনলে স্যাপ লেকের বিশাল জলাভূমি প্রতিনিয়ত পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। এখানকার জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়, মনোরম সমুদ্র সৈকত এবং শান্তিপূর্ণ গ্রাম্য পরিবেশ ভ্রমণকারীদের জন্য এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এদেশের সমাজে বৌদ্ধ ধর্মের গভীর প্রভাব রয়েছে, যা কম্বোডিয়ার প্রতিদিনের জীবনধারা এবং সংস্কৃতিতে প্রতিফলিত হয়।
কম্বোডিয়া ভিসার দাম কত ২০২৫
কম্বোডিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯৭ শতাংশ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে কাজের উদ্দেশ্যে কম্বোডিয়াতে যেতে চান, তবে বিভিন্ন কাজের ভিসা এবং টুরিস্ট ভিসার জন্য ভিসা প্রসেসিং খরচ প্রায় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
একজন ব্যক্তির বিমান ভাড়া সহ ভিসা প্রসেসিং ও যাবতীয় খরচ মোট ৬ থেকে ৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। সুতরাং, বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
টুরিস্ট ভিসার খরচ
কম্বোডিয়ার টুরিস্ট ভিসার জন্য খরচ হবে প্রায় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। এই খরচের মধ্যে ভিসা প্রসেসিং এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ অন্তর্ভুক্ত। মোট খরচ, বিমানের টিকেটসহ, প্রায় ৬ থেকে ৮ লক্ষ টাকা হতে পারে।
কম্বোডিয়া কাজের ভিসার দাম
ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য বর্তমান খরচ প্রায় ৪ লক্ষ থেকে ৬ লক্ষ টাকা। পূর্বে কাজের ভিসায় ২ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকায় সরাসরি কম্বোডিয়াতে যাওয়া যেত। তবে এখন ভালো টাকা ইনকাম করার সুযোগ থাকায়, ৬ থেকে ৮ লক্ষ টাকায় ভিসা প্রসেসিংসহ যাবতীয় খরচ সম্পন্ন হয়।
কম্বোডিয়া টুরিস্ট ভিসার দাম
বাংলাদেশের তুলনায় কম্বোডিয়ার টাকার মান অনেক কম। তবুও অর্থনৈতিকভাবে উন্নত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, স্থাপত্যশৈলীর মন্দির, বন্য প্রাণীতে ভরপুর গহিন অরণ্য, পাহাড় এবং সমুদ্রসৈকতের জন্য কম্বোডিয়া বেশ বিখ্যাত। টুরিস্ট ভিসার প্রসেসিংয়ের জন্য ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। মোট খরচ বিমান ভাড়া সহ প্রায় ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা।
কম্বোডিয়া ভিসার আবেদন ফি
ভ্রমণ পরিকল্পনা করার সময় সবার আগে যে বিষয়টি মাথায় আসে, সেটি হলো ভিসার খরচ। কম্বোডিয়ার ইতিহাস ও সংস্কৃতি পর্যটকদের ভীষণভাবে আকর্ষণ করে, তবে ভিসার প্রক্রিয়াটি নতুনদের কাছে কিছুটা জটিল মনে হতে পারে। ভিসার মূল্য কখনও কখনও রাষ্ট্রদূতাবাস বা ভিসা অফিসের নীতির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। এক্সপ্রেস সার্ভিসের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফি দিতে হয়, এবং কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ করতে হতে পারে। নিচে ২০২৫ সালের আনুমানিক ভিসা ফি-এর একটি ধারণা দেওয়া হলো—
| ভিসার ধরন | ফি (USD) | বৈধতা | প্রসেসিং সময় |
|---|---|---|---|
| টুরিস্ট ভিসা | ৩০ – ৪০ | ৩০ দিন | ৩–৫ দিন |
| বিজনেস ভিসা | ৫০ – ৭০ | ৩০ দিন | ৫–৭ দিন |
| এক্সপ্রেস ভিসা | ৬০ – ১০০ | ৩০ দিন | ১–৩ দিন |
| মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা | ১২০ – ১৫০ | ১ বছর | ৭–১০ দিন |
কম্বোডিয়া ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া
কম্বোডিয়া ভিসা পাওয়া তুলনামূলকভাবে সহজ, তবে প্রয়োজনীয় নথি ও সঠিক তথ্য প্রদান করা জরুরি।
১. অনলাইনে আবেদনঃ সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ই–ভিসা সিস্টেমের মাধ্যমে আবেদন করা। আপনার পাসপোর্টের তথ্য ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করে অনলাইনে ফি পরিশোধ করলেই প্রক্রিয়া শুরু হয়।
২. দূতাবাস বা কনস্যুলেটের মাধ্যমেঃ যদি সরাসরি আবেদন করতে চান, তবে কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতাবাসে গিয়ে আবেদনপত্র, ছবি ও অন্যান্য নথি জমা দিতে হবে।
৩. ভিসা স্টিকার গ্রহণঃ আবেদন অনুমোদনের পর আপনার পাসপোর্টে ভিসার স্টিকার লাগিয়ে দেওয়া হবে, যা দিয়ে আপনি কম্বোডিয়ায় প্রবেশ করতে পারবেন।
ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ভিসার প্রকারভেদ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টেশন আলাদা হতে পারে। তবে সাধারণত যে ডকুমেন্টগুলো প্রয়োজন হয় তা নিম্নরূপ:
- পূর্ণাঙ্গ পূরণকৃত ভিসা আবেদন ফর্ম
- বৈধ পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ অবশিষ্ট থাকতে হবে)
- সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- বিমান টিকেটের কপি (যদি প্রযোজ্য হয়)
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ
- হোটেল বুকিংয়ের প্রমাণ (যদি প্রযোজ্য হয়)
কম্বোডিয়া কাজের বেতন
কোন কাজের বেতন নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। দক্ষ ব্যক্তি কম্বোডিয়াতে মাসে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করতে পারে। অভিজ্ঞতা কম থাকলে বেতন ৪০ থেকে ৭০ হাজার টাকা হতে পারে। কনস্ট্রাকশন কাজের প্রচুর চাহিদা রয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে মাসে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ইনকাম করা সম্ভব।
কম্বোডিয়াতে কনস্ট্রাকশন কাজের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে অনেকেই এই সেক্টরে কাজের সুযোগ গ্রহণ করছেন। এই ধরনের কাজে, মাসে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ইনকাম করা সম্ভব।
কেন কম্বোডিয়া ভ্রমণ করবেন?
অনেকেই থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়া বেছে নেন, কিন্তু কম্বোডিয়ার নিজস্ব এক আকর্ষণ রয়েছে যা অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না —
- অ্যাংকর ওয়াটের প্রাচীন সৌন্দর্য: বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় স্থাপনা, যা ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।
- কম খরচে ভ্রমণ: হোটেল, খাবার ও পরিবহন—সবই সাশ্রয়ী।
- সহজ ভিসা নীতি: বাংলাদেশিদের জন্য অন–অ্যারাইভাল ও ই–ভিসা সুবিধা রয়েছে।
- বন্ধুবৎসল মানুষ ও উষ্ণ আবহাওয়া: ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হবে স্বস্তিদায়ক ও আনন্দময়।
শেষ কথা
আশা করি এই পোস্ট থেকে কম্বোডিয়া ভিসার খরচ এবং ভিসা পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। কম্বোডিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং কর্মসংস্থানের সুযোগের কথা বিবেচনা করে, এই দেশটি আপনার পরবর্তী গন্তব্যস্থল হতে পারে। যদি এই পোস্টটি আপনার জন্য উপকারী হয়, তাহলে আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন এবং তাদেরও জানার সুযোগ দিন। ধন্যবাদ।
কম্বোডিয়া ভিসার দাম ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে এখন নিশ্চয়ই আপনার ধারণা পরিষ্কার হয়েছে। মনে রাখবেন— নীতি ও ফি সময়ে সময়ে পরিবর্তন হতে পারে, তাই আবেদন করার আগে সর্বশেষ তথ্য যাচাই করুন।একটি সুন্দর ভ্রমণের প্রথম ধাপ হলো সঠিক প্রস্তুতি। তাই এখনই প্রস্তুত হন, কম্বোডিয়ার সৌন্দর্য উপভোগ করতে!
সাধারণত ৩০,০০০–৫০,০০০ টাকার মধ্যে ভ্রমণ সম্পন্ন করা যায়, যা ফ্লাইট, থাকা ও খাবারের উপর নির্ভর করে।
প্রায় ৫–৭ ঘণ্টা সময় লাগে, রুট অনুযায়ী কিছুটা পার্থক্য হতে পারে।
হ্যাঁ, বাংলাদেশিদের কম্বোডিয়া প্রবেশের জন্য ভিসা নিতে হয়।
হ্যাঁ, সাধারণত ২ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি জমা দিতে হয়।
সাধারণত নয়, তবে বিশেষ কিছু দেশের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকতে পারে।
সাধারণত ৩–৫ দিন সময় লাগে, তবে এক্সপ্রেস সার্ভিসে ১–২ দিনেই সম্ভব।
হ্যাঁ, আপনি চাইলে এক বছরের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা আবেদন করতে পারেন।



