রাশিয়া কাজের ভিসা ২০২৪

রাশিয়া কাজের ভিসা

রাশিয়া, বিশাল ভৌগোলিক বিস্তৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য পরিচিত, পৃথিবীর বৃহত্তম দেশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। পূর্ব ইউরোপের বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে অবস্থিত এই দেশটি প্রাকৃতিক সম্পদে অত্যন্ত সমৃদ্ধ, বিশেষ করে তেল ও গ্যাস উৎপাদনে এটি বিশ্বে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করে। তবে রাশিয়া শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সম্পদের জন্যই বিখ্যাত নয়, উন্নত প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রেও দেশটি বিশ্বে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। অনেকেই স্বপ্ন দেখেন উন্নত দেশ হিসেবে রাশিয়াতে গিয়ে কাজ করার। কিন্তু এই স্বপ্ন পূরণ করা সহজ নয়; রাশিয়ায় কাজ করতে গেলে আপনাকে কিছু কঠোর নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। প্রতিবছর রাশিয়া সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ করে থাকে। আপনি যদি সঠিকভাবে ভিসার জন্য আবেদন করেন, তবে স্বল্প খরচেই রাশিয়ার ভিসা পাওয়া সম্ভব।

রাশিয়ার কাজের ভিসা

বহু বাংলাদেশি বর্তমানে রাশিয়ায় কাজ করছেন, এবং আরও অনেকেই রয়েছেন যারা নতুন করে রাশিয়ায় কাজের জন্য যেতে আগ্রহী। কিন্তু রাশিয়ায় কাজের ভিসা পেতে কতটা খরচ হয় এবং কী ধরনের কাজ করতে হবে, তা জানা খুবই জরুরি। কাজের উদ্দেশ্যে রাশিয়ায় যেতে চাইলে আপনাকে প্রথমেই ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। কারণ, বৈধ পন্থা ছাড়া রাশিয়ায় প্রবেশ করা একেবারেই অসম্ভব। বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় যেতে বেশ কিছু টাকা খরচ হবে। বিশেষ করে, যদি আপনি কোনো এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা করতে চান, তাহলে খরচ আরও বাড়তে পারে। তবে পরিচিত কেউ থাকলে তাদের মাধ্যমে কিছুটা কম খরচে ভিসা পাওয়া সম্ভব।

বর্তমান পরিস্থিতিতে রাশিয়ায় যেতে প্রয়োজনীয় খরচ আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। ভিসার ক্যাটাগরির উপর খরচ নির্ভর করবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি স্টুডেন্ট ভিসা বা টুরিস্ট ভিসা করতে চান, তাহলে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা থেকে ৬ লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে। তবে কাজের জন্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসা করতে ৯ লক্ষ টাকা থেকে ১৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।

কাজের সুযোগ

রাশিয়ায় কাজের ক্ষেত্রে আপনি বিভিন্ন ধরনের পেশায় যোগদান করতে পারেন। নিচে কিছু জনপ্রিয় পেশার তালিকা দেওয়া হলো:

  • ফুড প্যাকেজিং অপারেটর
  • চিকেন ফ্যাক্টরি অপারেটর
  • অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি
  • কার্পেন্টার
  • নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার
  • কনস্ট্রাকশন কর্মী
  • ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার
  • মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার
  • ক্লিনার

ওয়ার্ক পারমিট ভিসা

রাশিয়ায় কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করা। প্রতি বছর, রাশিয়া সরকার নির্দিষ্ট সংখ্যক শ্রমিকদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করে থাকে। অন্যান্য ভিসার তুলনায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসা করতে কিছুটা বেশি খরচ হতে পারে। তবে যদি সরকারিভাবে আপনি ভিসা পেয়ে যান, তাহলে কম খরচেই রাশিয়ায় পৌঁছানো সম্ভব। বাংলাদেশ থেকে এজেন্সির মাধ্যমে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা করতে গেলে খরচ কিছুটা বেশি হতে পারে। সাধারণত, এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করতে ডাবল খরচ হতে পারে। বর্তমান বাজারে রাশিয়ার ওয়ার্ক পারমিট ভিসা করতে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা থেকে ১৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়তে পারে।

বোয়েসেল রাশিয়া নিয়োগ

কিছুদিন আগেই একটি খবর থেকে জানা গেছে যে বোয়েসেলের মাধ্যমে রাশিয়ায় শ্রমিক নিয়োগ করা হবে। বোয়েসেল একটি সরকারি সংস্থা, যা বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে। এই নিয়োগের মাধ্যমে রাশিয়ার বিভিন্ন পদবীর জন্য ৯৬১ জন কর্মী নিয়োগ করা হবে। যারা এই নিয়োগের মাধ্যমে রাশিয়ায় যাবেন, তারা অনেক বেশি বেতন পেতে পারেন। সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা থেকে ৬৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন দেওয়া হতে পারে। এই সুযোগে অনেকেই বোয়েসেলের মাধ্যমে ভিসার জন্য আবেদন করেছেন। আপনার পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন ক্যাটাগরির কাজে বোয়েসেলের মাধ্যমে রাশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

সরকারিভাবে রাশিয়া যাওয়ার উপায়

সরকারি পদ্ধতিতে রাশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ রয়েছে এবং এটি তুলনামূলকভাবে কম খরচের হতে পারে। প্রতিবছর বাংলাদেশ সরকার শ্রমিকদের জন্য একটি বিশেষ সুযোগ তৈরি করে, যেখানে অনলাইনে আবেদন করে রাশিয়ার ভিসা পাওয়া সম্ভব। অনলাইনের মাধ্যমে সরকারিভাবে রাশিয়ার ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ার জন্য নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে কিছুদিন অপেক্ষা করলেই আপনি রাশিয়ার ভিসা পেয়ে যেতে পারেন। এ প্রক্রিয়ায় সফলভাবে ভিসা পেলে তুলনামূলকভাবে কম খরচে রাশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ থাকে।

রাশিয়া যাওয়ার সহজ উপায়

বাংলাদেশ থেকে সহজে রাশিয়ায় যেতে চাইলে আপনাকে একটি কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। প্রথমে, একটি এজেন্সির সাহায্যে ভিসা করতে হবে। কারণ, ভিসা ছাড়া আপনি কখনো রাশিয়ায় প্রবেশ করতে পারবেন না। অবৈধ পথে রাশিয়া যাওয়া অনেক কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ। ঢাকায় বিভিন্ন এজেন্সি রয়েছে, যেখানে আপনি সহজেই আপনার পছন্দমত ভিসা প্রসেস করতে পারেন। এছাড়াও, সরকারি সার্কুলার অনুযায়ী অনলাইনে আবেদন করে রাশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

রাশিয়ায় কাজের বেতন কেমন

কোনো কাজ শুরু করার আগে সেই কাজের বেতন সম্পর্কে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই রাশিয়ায় যাবার আগে জানতে চান যে, সেখানে কাজ করলে কত টাকা বেতন পাওয়া যায়। অন্যান্য দেশের তুলনায় রাশিয়ায় বেতন কিছুটা বেশি হতে পারে। আপনার বেতন মূলত আপনার কাজের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার উপর নির্ভর করবে। যদি আপনার অভিজ্ঞতা কম থাকে, তবে আপনি তত বেশি বেতন পাবেন না। নতুন অবস্থায় কাজ শুরু করলে প্রায় ১ লক্ষ টাকা বেতন পাওয়া সম্ভব। অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এবং ওভারটাইম কাজ করলে ২ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বেতন পাওয়া যেতে পারে।

রাশিয়ার কাজের ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস

রাশিয়ার ভিসা করতে হলে কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে। এ ডকুমেন্টগুলো ছাড়া আপনি কখনোই ভিসা পাবেন না। সরকারিভাবে বা এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা পেতে হলে নিম্নলিখিত ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে:

  • ছয় মাস মেয়াদ সম্পূর্ণ বৈধ পাসপোর্ট
  • ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি বা অনলাইন জন্ম সনদের ফটোকপি
  • পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গিন ছবি
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র
  • ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদপত্র
  • মেডিকেল রিপোর্টের সনদপত্র

শেষ কথা

যারা রাশিয়ায় কাজের উদ্দেশ্যে যেতে চান, কিন্তু প্রয়োজনীয় তথ্য সম্পর্কে জানেন না, তাদের জন্য এই নিবন্ধটি সহায়ক হতে পারে। রাশিয়ায় যাওয়ার প্রক্রিয়া, খরচ এবং বেতন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এখানে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা আশা করি, এই তথ্যগুলো আপনার ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ায় সহায়ক হবে এবং রাশিয়ায় কাজের সুযোগ তৈরি করতে সহায়তা করবে। ধন্যবাদ!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top