ওমান ভিসার দাম ২০২৫

ওমান ভিসার দাম

ওমান, আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এক অভিনব রাষ্ট্র, যার অধিকাংশ ভূমিরাজ্য বিস্তৃত মরুভূমির আবরণে ঢাকা। প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ থেকে অনেকেই কর্মসংস্থান অথবা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ওমানের পথে পাড়ি জমান। বিগত কয়েক বছরে ওমান যাত্রার ভিসা খরচ অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অনেকের জন্য চিন্তার কারণ। ওমানের পরিবেশ, যা প্রধানত মরুভূমি দ্বারা পরিচালিত, তার অনন্য রূপ ও ঐতিহ্যে অনেকের আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই দেশের ৮০% এরও বেশি ভূখণ্ড শুষ্ক ও বালুময়, যা একদিকে যদিও কঠোর জীবন যাপনের পরিবেশ তৈরি করে, অন্যদিকে ভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য প্রদান করে।

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Channel Join Now

ওমান ভিসার ধরন

ওমানে যাত্রা করার নিমিত্তে বিভিন্ন ধরনের ভিসা উপলব্ধ আছে, যার মধ্যে রয়েছে:

ওয়ার্ক ভিসা

  • উদ্দেশ্য: ওমানে চাকরি করার জন্য।
  • যাদের জন্য: যাদেরকে কোনো ওমানি কোম্পানি নিয়োগ দিয়েছে।
  • মেয়াদ: সাধারণত ২ বছর, পরে নবায়নযোগ্য।
  • প্রক্রিয়া: নিয়োগদাতা কোম্পানি ওমানে স্পন্সর করে ভিসা ইস্যু করে।

স্টুডেন্ট ভিসা

  • উদ্দেশ্য: ওমানে শিক্ষা গ্রহণ।
  • যাদের জন্য: ওমানের কোনো স্বীকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা।
  • মেয়াদ: কোর্সের সময় অনুযায়ী।
  • শর্ত: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ভিসা অনুমোদনের জন্য চিঠি লাগবে।

ভিজিট ভিসা

  • উদ্দেশ্য: ঘুরতে যাওয়া বা আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে দেখা করা।
  • যাদের জন্য: ওমানে বসবাসরত আত্মীয় বা বন্ধুর আমন্ত্রণে যাওয়া ব্যক্তিরা।
  • মেয়াদ: সাধারণত ১ মাস, নবায়নযোগ্য।
  • নোট: পারিবারিক বা ব্যবসায়িক ভিজিট ভিসাও রয়েছে।

ইনভেস্টর ভিসা

  • উদ্দেশ্য: ওমানে ব্যবসা শুরু করা বা বিনিয়োগ করা।
  • যাদের জন্য: যারা ওমানে কোম্পানি খুলতে চান বা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।
  • শর্ত: নির্দিষ্ট পরিমাণ পুঁজি ও বৈধ কাগজপত্র লাগবে।
  • সুবিধা: এই ভিসায় বসবাস ও ব্যবসার সুযোগ পাওয়া যায়।

ফ্রি ভিসা

  • উদ্দেশ্য: এটি মূলত অবৈধ বা অপ্রাতিষ্ঠানিক উপায়ে ব্যবহৃত হয়।
  • বাস্তবতা: ওমান সরকার এমন কোনো অফিসিয়াল “ফ্রি ভিসা” ইস্যু করে না, কিন্তু কেউ কেউ স্পন্সর ভিসা নিয়ে গিয়ে অন্য জায়গায় কাজ করেন, যেটা নিয়মবিরুদ্ধ।
  • ঝুঁকি: আইনি সমস্যা, জরিমানা, দেশে ফেরত পাঠানোর আশঙ্কা।

ফ্যামিলি ভিসা

  • উদ্দেশ্য: ওমানে কর্মরত ব্যক্তির স্ত্রী, সন্তান বা পিতা-মাতাকে সঙ্গে নেওয়া।
  • শর্ত: স্পন্সর (ওমানে কর্মরত ব্যক্তি) এর নির্দিষ্ট আয় থাকতে হয়।
  • মেয়াদ: সাধারণত ওয়ার্ক ভিসার মেয়াদের সমান।

ওমান ভিসার দাম

প্রতিটি ব্যক্তি ওমানে যাওয়ার পেছনে ভিন্ন ভিন্ন কারণ নিয়ে এগিয়ে আসে। কেউ কাজ করতে, কেউ পড়াশোনা করতে আবার কেউ স্বজনদের দেখতে যান। যেহেতু উদ্দেশ্য আলাদা, তাই সেই অনুযায়ী ভিসার ধরনও আলাদা হয়। ওমানে যাওয়ার আগে যাত্রীর উদ্দেশ্যের ওপর ভিত্তি করে সঠিক ভিসা নির্বাচন করা জরুরি, কারণ সেটাই নির্ধারণ করে ভিসা প্রক্রিয়া ও ব্যয় কত হবে। বাংলাদেশ থেকে ওমানে কাজের ভিসা নিয়ে যেতে চাইলে সাধারণত আনুমানিক ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। অন্যদিকে, যদি কারো লক্ষ্য হয় পড়াশোনা বা ঘুরতে যাওয়া, তাহলে তার ভিসা ও যাতায়াত মিলিয়ে খরচ হতে পারে প্রায় ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে। আবার কেউ যদি ফ্রি ভিসা নিতে চান, তাহলে তার জন্য খরচটা তুলনামূলক বেশি হয়—সাধারণত ৩.৫ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গিয়ে থাকে।

ওমান ভিসার দাম ২০২৫

ওমানের কর্মসংস্থান বাজারে প্রতিবছর বিভিন্ন কোম্পানি বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ দেয়। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া মাধ্যমে বিদেশি শ্রমিকরা ওমানের কর্মসংস্থান ভিসা, যা সাধারণত ‘কোম্পানি ভিসা’ নামে পরিচিত, লাভ করে থাকেন। এই ধরনের ভিসা পাওয়ার জন্য দুই পথ রয়েছে—সরকারিভাবে এবং বেসরকারিভাবে দালালের মাধ্যমে। বিভিন্ন ধরনের ভিসার খরচ ভিন্ন ভিন্ন। যদিও অনেক ক্ষেত্রে খরচ বেশি হতে পারে, তবে সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে ওমানে যাত্রা করলে খরচ অনেক কমে যায়। নিম্নলিখিত হল বিভিন্ন ভিসা প্রকারের প্রাথমিক খরচ সম্পর্কিত একটি ধারণা:

১. সরকারিভাবে ওমান ভিসার দাম

সরকারিভাবে কোম্পানি ভিসা পাওয়া যায় এমন প্রক্রিয়া অনেক বেশি নিরাপদ এবং খরচ-কার্যকর। সরকারি উদ্যোগে প্রদত্ত ভিসা সাধারণত কম খরচে এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাপ্তি সম্ভব। এই প্রক্রিয়াটি বিদেশি শ্রমিকদের জন্য আর্থিকভাবে সহায়ক হতে পারে, কারণ খরচ প্রায় ১ লক্ষ টাকা থেকে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে, যা বেসরকারি চ্যানেলের চেয়ে অনেক কম।

২. বেসরকারিভাবে ওমান ভিসার দাম

অপরদিকে, যদি কেউ বেসরকারিভাবে, অর্থাৎ দালাল বা এজেন্সির মাধ্যমে ওমানের কোম্পানি ভিসা পেতে চায়, তাহলে খরচ আরো বেড়ে যায়। এই খরচ প্রায় ৩.৫ লক্ষ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এই ব্যয় বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে দালাল বা এজেন্সির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জটিলতা এবং অতিরিক্ত ফি সমূহ।

ওমান বেতন কত

যারা ওমানে চাকরি করার চিন্তা করছেন, তাদের মনে স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন জাগে—ওমানে কাজ করলে বেতন কেমন পাওয়া যায়? আসলে এই দেশের মজুরি নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের উপর। যেমন আপনি কোন ধরনের পেশায় যাচ্ছেন, আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা কী, কাজের অভিজ্ঞতা কেমন, কোম্পানি কোন জায়গায় অবস্থিত, এবং সেটি কতটা বড় বা স্বনামধন্য—এসব বিষয় বড় ভূমিকা রাখে বেতনের পরিমাণ নির্ধারণে।

বর্তমানে ওমানে সাধারণ শ্রমিক থেকে শুরু করে মাঝারি পর্যায়ের কাজের বেতন গড়ে ২৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে (বাংলাদেশি টাকায়)। তবে যদি আপনার কাজের ক্ষেত্রে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বেশি থাকে, তাহলে মাসিক আয় ১ লাখ টাকার কাছাকাছিও হতে পারে। মূলত ভালো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পেলে বেতন অনেকটা বেশি হওয়াই স্বাভাবিক।

ওমান কাজের বেতন কত

কাজবেতন
বাগানের কাজ১০০-১২০ ওমানি রিয়াল
ওয়েটার১০০-১৫০ ওমানি রিয়াল
সুপার মার্কেট১২০-১৫০ ওমানি রিয়াল
শেফ২০০-২৫০ ওমানি রিয়াল
ইলেকট্রিশিয়ান২৮০-৩৬০ ওমানি রিয়াল
রাজমিস্ত্রী৩০০-৪০০ ওমানি রিয়াল

ওমান যাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্রের তালিকা

ওমান যাত্রা করার জন্য প্রস্তুতি অত্যন্ত জরুরি, বিশেষ করে ভিসা প্রক্রিয়াকরণের জন্য নির্দিষ্ট কিছু নথিপত্রের প্রয়োজন হয়। নিম্নলিখিত হলো সেই নথিপত্রগুলোর একটি বিস্তারিত তালিকা, যা আপনাকে ওমান ভিসার জন্য প্রস্তুতি পর্বে জমা দিতে হবে:

  1. পাসপোর্ট : অবশ্যই আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ছয় মাস থাকতে হবে। পাসপোর্টটি সচল থাকতে হবে যাতে কোনো ধরনের বৈধতা সংক্রান্ত সমস্যা না হয়।
  2. ফটোগ্রাফ: পাসপোর্ট আকারের দুই কপি রঙিন ছবি, যা সাম্প্রতিক এবং স্পষ্ট হতে হবে। ছবির পেছনে আপনার নাম এবং জন্ম তারিখ উল্লেখ করা উচিত।
  3. জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন: আপনার নিজের এবং আপনার বাবা-মার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি। যদি আপনি ১৮ বছরের কম বয়স্ক হন, তবে জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি প্রয়োজন হবে।
  4. ভিসা আবেদন ফরম: পূর্ণাঙ্গ ভাবে পূরণ করা ভিসার আবেদন ফরম, যা কোনো ত্রুটি ছাড়াই সঠিকভাবে পূরণ করা উচিত।
  5. পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট: একটি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট যা প্রমাণ করে যে আপনার বিরুদ্ধে কোনো আইনি অভিযোগ নেই।
  6. ব্যাংক স্টেটমেন্ট: গত ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, যা আপনার আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রদর্শন করবে।
  7. ভ্যাকসিনের সনদপত্র: কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের পূর্ণাঙ্গ ডোজ সম্পন্ন হওয়ার প্রমাণ হিসেবে ভ্যাকসিনের সনদপত্র। এই সনদপত্রটি ভ্রমণের সময় বিভিন্ন পর্যায়ে প্রয়োজন হতে পারে।

এই নথিপত্রগুলো সঠিকভাবে আয়োজন করা এবং ভিসা আবেদনের সময় জমা দেওয়া খুব জরুরি। নথিপত্রগুলোর সাহায্যে ভিসা প্রক্রিয়াকরণ আরও মসৃণ ও দ্রুত হয়। সঠিক নথিপত্র প্রস্তুতি না করলে, ভিসা প্রাপ্তিতে বিলম্ব হতে পারে অথবা আবেদন বাতিল হতে পারে, যা আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

শেষ কথা

কোম্পানি ভিসা পেলে, শ্রমিকরা ওমানের বিভিন্ন কোম্পানিতে বৈধভাবে কর্মরত হতে পারেন। এটি নিয়োগকর্তার সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ দেয় এবং শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের নিরাপত্তা প্রদান করে। তবে, এই ভিসা প্রাপ্তির পথে অনেক সময় জটিল ব্যুরোক্র্যাটিক প্রক্রিয়া ও কিছু আইনি বাধা পেরোতে হয়, যা প্রাথমিকভাবে চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। ওমানে কোম্পানি ভিসা পেতে গেলে, সরকারিভাবে অগ্রাধিকার দেওয়া উত্তম। এটি খরচ কমানোর পাশাপাশি প্রক্রিয়াটি আরও স্বচ্ছ ও নিরাপদ করে তোলে। অন্যদিকে, বেসরকারি পথ বেছে নিলে, খরচ অনেক বেশি হতে পারে এবং জটিলতার সম্মুখীন হতে হতে পারে, তাই এই পথে এগোনোর আগে সব দিক বিবেচনা করা উচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top